বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলের জায়গায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের করা ‘মদিনা ফিলিং স্টেশন’ এর একাংশ উচ্ছেদ করা হয়েছে।
গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন গাড়ি মেরামতের শেড এবং মদিনা পানির ট্যাংকের গুদামের সামনের অংশও।
সোমবার অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর অভিযানে এসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামালবাগ এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রায় শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদের পর বিকাল তিনটার দিকে দলটি মদিনা ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছে। তারা মেপে দেখেন, সাংসদের মালিকানাধীন ফিলিং স্টেশনসহ পাশের গাড়ি মেরামতের শেড ও পানির ট্যাংকের গুদামটি নদীর সীমানার মধ্যেই পড়েছে। সব মিলিয়ে দখল করা হয়েছে ৪০০ বর্গফুটের মতো জায়গা।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক সাধন চন্দ্র সরকার বোঝানোর চেষ্টা করেন, নদী তীরের সীমানা যে এতদূর চলে এসেছে, তারা সেটা জানতেন না। এখন সময় দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দখল করা জায়গায় গড়ে তোলা স্থাপনা সরিয়ে নেবেন।
তবে সে কথায় কান না দিয়ে তীর দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল।
প্রথমে ফিলিং স্টেশনের ডান দিকে গাড়ি ধোয়ার শেডটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে পাশের জমিতে অবস্থিত গাড়ি মেরামতের শেডটি উচ্ছেদ করা হয়।
ফিলিং স্টেশনের সামনের দিকে পাম্পের শেডটি (যেখানে গাড়িতে তেল ভরা হয়) না ভাঙার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা গুলজার আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জায়গাটিতে বিস্ফোরক অর্থাৎ তেল জাতীয় পদার্থ আছে। তাই ভাঙতে গেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়। মালিকপক্ষ বলেছে, তারা নিজেরাই এটা সরিয়ে নেবে।’
মদিনা পাম্পের পাশে হাজি সেলিমের মদিনা পানির ট্যাংকের গুদামটিও বসানো হয় সরকার জমিতে
ভাঙচুরের আগে-পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ফিলিং স্টেশনটিতে তেল বিক্রি বন্ধ ছিল। এ সময় হাজী সেলিমের লোকজন সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এই জমিটি ২০০৫ সালে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলকে বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু হাজি সেলিমের কারণে সেখানে স্কুল করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
গত অক্টোবরে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধোরের মামলায় ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেফতারের পর হাজি সেলিমের অবৈধ দখলের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্যের দখল থেকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে অগ্রণী ব্যাংকের শত কোটি টাকার জমি প্রথমে উদ্ধার করা হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে উদ্ধার করা হয় সরকারি খাস জমি।
যদিও অগ্রণী ব্যাংকের সেই জমি আবার নিজের দখলে নিয়েছেন হাজি সেলিম। আর তার বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল দখল করে সেখানে প্রয়াত স্ত্রী গুলশান আরার নামে মার্কেট করার অভিযোগ আছে।
এ ছাড়াও বহু বেসরকারি জমি ও বাড়ি দখলের অভিযোগ আছে ঢাকার এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের শুরুতে বুড়িগঙ্গা তীরে হাজি সেলিমের দখল করা বহু সম্পদ উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএ।
নদী তীরে পুনর্দখল ঠেকাতে গতকাল রোববারও ইমামগঞ্জ ও সোয়ারিঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটিএ।
ইমামগঞ্জে হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা কোল্ডস্টোরেজের সামনে অংশ ভেঙে ফেলা হয়। আর অভিযানের খবর পেয়ে সোয়ারিঘাটের আরেকটি স্থাপনার অবৈধ অংশ অনুসারীদের দিয়ে আগেই সরিয়ে ফেলেন হাজি সেলিম।
দুই দিনে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। যার মধ্যে বহুতল টিনের ঘর, পাকা ভবন, আধাপাকা ভবন, স্টিলের গুদাম, টংঘর ও দোকানঘর আছে।
বাধা আদালতের স্থগিতাদেশ
উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার কারণে দ্বিতীয় দিন অনেকগুলো স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ।
কামালবাগ এলাকায় যেখান থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছিল সেখানে কয়েকটি বহুতল ভবন ছিল, যার একাংশ নদীর সীমানার মধ্যে পড়েছ।
সেখানে অভিযান চালানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তারা ভবনগুলোর অবৈধ অংশ ভাঙতে পারেননি।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে এদিন অভিযানে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা সদস্যদের রাখা হয়। অভিযানকে ঘিরে ঘটনাস্থলে ভিড় করে শত শত উৎসুক জনতা।