বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে মাথা গরম না করার পরামর্শ দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের ‘মাথা ঠান্ডা রেখে’ আগানোর কথা বলেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আমরা সরকারে আছি। ক্ষমতায় আছি। আমাদেরকে ঠান্ডা মাথায় এগুতে হবে। বুঝে-শুনে পরিস্থিতিটা আমাদেরকে ট্যাকেল করতে হবে।’
সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে ধর্ম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেনসেটিভ ইস্যু। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিজেই দেখছেন এবং এটা ট্যাকেল করছেন সেভাবে। আমরা অহেতুক দেশে একটা অশান্তি বিশৃঙ্খল পরিবেশের উসকানি দিতে চাই না। আমরা যুক্তি দিয়ে বলতে চাই, তারা যা বলছে তা সঠিক নয়।’
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলছিলেন কাদের।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন, তখন শনিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সরকারে আছি। সব ব্যাপারে মাথা গরম করলে চলবে না।’
এর আগের রাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করার পর আওয়ামী লীগ ও সমমনারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ভাস্কর্যবিরোধীদের নেতা জুনাইদ বাবুনগরী, মামুনুল হক, ফয়জুল করীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদনও হয়েছে আদালতে।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাটি ক্ষুব্ধ করেছে আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের
এই পরিস্থিতিতে কৌশলী হতে চান কাদের। বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোতে মাঝে মাঝে ধর্মীয় বিষয়, ধর্মীয় ইস্যু সামনে চলে আসে। এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। কাছে সবকিছু আমরা অবজার্ভ করছি।...আমি মনে করি, কিছু কিছু বিষয় আছে আমাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা উচিত।’
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা করা করল, এটা তো কোনো বিষয় না। এ ধরনের ঘটনা সংবিধান ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কারণ বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা।’
ভাস্কর্যবিরোধীরা যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাক্ষাৎ দেবেন কি না, কবে দেবেন, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
চলমান অবস্থায় আলাপ আলোচনার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা প্রধানমন্ত্রী বুঝবেন। তিনি সরকারপ্রধান। তিনি যদি মনে করেন তাহলে হতে পারে। এটা তার সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তিনি যেটা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা হবে।’
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের অভিযোগে কুষ্টিয়ায় একটি কওমি মাদ্রাসার চার ছাত্র-শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় ইন্ধনদাতা রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা, এমন প্রশ্নে কাদের বলেন ‘উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে কাউকে ভিকটিমাইজ করা উচিত নয়। আমরা যদি সেরকম প্রমাণ পাই কারও বিরুদ্ধে, কেউ হুকুম দিয়েছে, এমন কোনো স্বাক্ষ্য প্রমাণ থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একই ইস্যুতে অতীতে সরকারের নমনীয়তার প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করছেন বহুজন।
সরকারের আশকারা পেয়েই হেফাজত এই সাহস দেখাচ্ছে কি না জানতে চাইলে, ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার ১৪ লাখ শিক্ষার্থী আছে। তারা মেইনস্ট্রিম থেকে দূরে আছে। তাদেরকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মেইনস্ট্রিমে আনার জন্য, তাদের এ দাবিটাকে (কওমি সনদের স্বীকৃতি) ন্যায়সঙ্গত মনে করা হয়েছে। সেজন্য মেনে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ এই নয়, তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, হলে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিষয় এখানে নেই।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে দুই দিন ধরে দেশ জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সমমনারা
অবশ্য ওবায়দুল কাদের এও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হামলা যারা করেছে, করার ধৃষ্টতা যারা দেখাবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মূর্তিটা হল দেবতার। আর ভাস্কর্য তো মানুষের। ভাস্কর্যকে পূজা করা হয় না।’
এ সময় বিভিন্ন ইসলামিক দেশের ভাস্কর্য থাকার উদাহরণও তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।
কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের কাজ চলবে বলেও জানান মন্ত্রী।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, এই ঘটনায় জামায়াতের ইন্ধন আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।