বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চরম অন্যায়, বললেন সেই মাদ্রাসার শিক্ষক

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৯:০২

আগে কোনোভাবেই যদি জানতে পারতাম তাদের এ কাজ করতে দিতাম না। তারা এ কাজ করে চরম অন্যায় করেছে: ইবনি মাসউদ (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. মুসা

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরে যাদের নাম এসেছে তারা শহরতলীর ইবনি মাসউদ (রা.) এর ছাত্র ও শিক্ষক।

মাদ্রাসাটি জুগিয়া মাদার শাহ পশ্চিম পাড়া এলাকায় অবস্থিত। শহর থেকে এর দূরত্ব চার কিলোমিটারের মতো।

মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা চরমোনাই পীরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম প্রথমে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে।

ভাস্কর্য ভাঙার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ সিদ্ধান্তে আসে যে, এই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বক্কর ও মো. নাহিদুল ইসলাম এই কাজ করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা শুক্রবার রাতে মাদ্রাসা থেকে হেঁটে বের হয়ে এই কাজ করেছেন। আর হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই শিক্ষককে ঘটনা জানান। আর তারা দুই ছাত্রকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

এই দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন আল আমিন ও ইউসুফ আলী।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউটিউবে হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের ফয়জুল করীমের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কাজ করেছেন।

অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধী হলেও এটা ভেঙে ফেলতে হবে, সে কথা কখনও বলেননি। ফলে পুলিশ যা বলেছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।

মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে কোনোভাবেই যদি জানতে পারতাম, তাদের এ কাজ করতে দিতাম না। তারা এ কাজ করে চরম অন্যায় করেছে।’

গ্রেফতার আবু বক্কর ও নাহিদের একাধিক সহপাঠী জানিয়েছেন, এই দুই ছাত্র ইউটিউবে ওয়াজ শুনতেন। সেখান থেকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরিফ জানান, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী মঙ্গলবাড়িয়া, আলফার মোড় ও ত্রিমোহনী বাজারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। সেখানে তারা ইউটিউবে বিভিন্ন হুজুরের ওয়াজ শোনেন এবং এ নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে মাওলানা মামুনুল হকের ভাস্কর্যবিরোধী ওয়াজ শুনতেন তারা।

গ্রেফতার দুই জনের এক সহপাঠী বলেন, ‘সে যে এ রকম একটা কাজ করবে সেটা আমরা কল্পনা করি নাই। আমরা একসঙ্গে থাকি, নানা বিষয়ে কথাও বলি। কিন্তু এটা ভাঙতে হবে, এমন কোনো আলোচনা কখনও হয়নি।’

আরেক সহপাঠী বলেন, ‘এরা ওয়াজ শুনতে খুবই পছন্দ করত। ভেতরে মোবাইল রাখার নিয়ম নেই। তাই তারা বাইরে চলে যেত।’

খবর শুনে আবু বক্করের খোঁজ নিতে মাদ্রাসায় আসেন তার চাচা ছবির আলী। তিনি এই ঘটনায় বিস্মিত বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বক্করকে এমনভাবে জানে না তার পরিবারের কেউই। তারা জানেন, বক্কর মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষা নিচ্ছে।’

বক্করের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সিংপুর গ্রামে। তিনি খুব একটা বাড়িতে যেতেন না বলে জানিয়েছেন তার চাচা।

নাহিদুল ইসলামের বাড়ি দৌলতপুরের ফিলিপনগরে।

২০১৪ সালে কওমি মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে পশ্চিমে প্রধান সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার যওয়ার পর ত্রিমোহনীর কিছুটা আগে বাম দিকে রয়েছে মাদ্রাসাটির সাইনবোর্ড। এখান থেকে কাঁচা রাস্তায় আরও আধা কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে মাঠের মধ্যে মাদ্রাসাটিকে দেখা যায়।

মাদ্রাসায় গিয়ে এর পরিচালক মাওলানা আফজাল হোসেন কাশেমীকে পাওয়া যায়নি। সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মো. মুসা বলেন, ‘অন্যান্য কওমি মাদ্রাসার মতোই এর শিক্ষাক্রম। মক্তব, হেফজ, জামাত ও মাওলানা বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বেতন মানুষের সাহায্য থেকে আসা অর্থ দিয়েই চলে।’

ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এই মাদ্রাসায় বর্তমানে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা খুব একটা পড়ে না এই মাদ্রাসায়। ভর্তি হন দূর দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা।

এ বিভাগের আরো খবর