বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ হলে আরেকটি শাপলা চত্বর পরিস্থিতি তৈরির হুমকি দেয়া হেফাজতে ইসলাম মামুনুল হককে কক্সবাজারে ‘খেলার আমন্ত্রণ’ জানিয়েছেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ ও প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে মাহফিল বাতিল হওয়া মামুনুল হকের অনুসারীরা কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়ায় কয়েকটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করছে।
মামুনুল এসব মাহফিলে যোগ দিতে পারেন ধারণা করে মামুনুলকে কক্সবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।
- আরও পড়ুন: মামুনুলের নরম সুর
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে রোববার বিকালে কক্সবাজার পৌরসভা চত্বরে মানববন্ধন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেখানে মেয়র মুজিবুর রহমান হেফাজত নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কক্সবাজারে আসুন, খেলা হবে।’
- আরও পড়ুন: মাঠে আসেন খেলা হবে, মামুনুলকে নিক্সন
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে কক্সবাজার পৌরসভা চত্বরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ
মেয়র বলেন, ‘যার জন্ম নইলে আরা ১৬ কোটি মানুষ সোনার বাংলাদেশ ইয়ান ন পাইহতাম এরিমা ওগ্গা দেশ প্রেমিকর ভাস্কর্য লয়রে প্রশ্ন তুইল্লস তোই কুলাংগার মামুনুল হক। তুই রাজাকার পোয়া তর বাপ একাত্তরর রাজাকার আইসসিল তুই ও তর বাপর মত হয়স দে নে।’
(যার জন্ম না হলে আমরা ১৬ কোটি মানুষ সোনার বাংলাদেশ পেতাম না। এ রকম একজন দেশপ্রেমিকের ভাস্কর্ নিয়ে আপনার মতো কুলাংগার প্রশ্ন তুলেছেন। আপনি রাজাকারের পুত্র। আপনার বাবা একাত্তরে রাজাকার ছিলেন। আপনিও তার মতো হয়েছেন’)
‘তরে চারি ন দিয়ুম তরে চাই লয়ুম তুই হন। তুই হত্তর প্রসিডেন্ট। তরে লাই আরার কক্সসবাজার পথ নিষিদ্ধ। তরলাই করার কক্সসবাজারর মানুষ অপেক্ষা গরির তুই হন সময় যদি কক্সসবাজার আইয়স তরে হাইয়ি। তরে চাই লইয়ুম তুই যে হাত দি বঙ্গবন্ধু'র ভাস্কর্যত আগাত গইজ্জস হাত ইয়ান জালাই দিয়ুম।’
(আপনাকে ছেড়ে দেব না। যে কথা বলেছেন, তার জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। আপনি কোথাকার প্রেসিডেন্ট। আপনার জন্য আমাদের কক্সবাজারের পথ নিষিদ্ধ। আপনার জন্য আমার কক্সবাজারের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। যদি কোনো সময় আপনি কক্সবাজারে আসেন, আপনাকে খেয়ে ফেলব। আপনারা যে হাত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছেন, সে হাত জ্বালিয়ে দেব।)
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মামুনুল হক শুরুতে বেশ উত্তেজিত বক্তব্য রেখেছিলেন। বলেছিলেন, এই ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবেন।
এই ঘোষণা দিয়ে অবশ্য ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিবকে। গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে পূর্বঘোষিত একটি মাহফিলে তিনি যোগ দেননি ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিরোধের মুখে।
মাহফিল বাতিল হয়েছে নড়াইল, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কিছু জেলাতেও। শীতকালে এই মাহফিলগুলো ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতাদের আয়ের একটি বড় উৎস। এই পরিস্থিতিতে মাহফিল বাতিল হওয়ার পর মামুনুল সুর নরম করেছেন।
গত ২৯ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে উসকে দেয়া হচ্ছে। বলেছেন, তিনি ভাস্কর্যবিরোধী হলেন ‘সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবেন না।’
কক্সবাজারের মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্রকে আর ছাড় নয়। স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান মামুনুল হককে কক্সবাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।’
আরও পড়ুন: প্রতিরোধের মুখে মাহফিলে গেলেন না মামুনুল
মেয়র বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রভু পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহর ভাস্কর্য রয়েছে। এটি নিয়ে তারা কথা বলে না। বাংলাদেশের জাতির পিতার উপরই তাদের ক্ষোভ। তারা নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে দিতে চায় না। নতুন প্রজন্ম তাদের অতীত ইতিহাস জানলে তাদের অপপ্রচার ও অপকর্ম চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে, তাই স্বাধীনতার মহানায়কের ভাস্কর্য ভেঙে ইতিহাসের চাকা উল্টো পথে নিয়ে যেতে চায়।
মানবন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জল করের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিমসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।
জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।