হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীমের ওয়াজ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছেন মাদ্রাসা ছাত্ররা।
শুক্রবার রাতে ভাঙচুরের ঘটনায় আটকদের রোববার গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে পুলিশ। এ সময় এ কথা জানানো হয়।
এই ঘটনায় জড়িতদের নাম পরিচয় আর ভাঙচুরের বর্ণনা দিয়ে বিকেলে ব্রিফ করে কুষ্টিয়া পুলিশ। পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজ খন্দকার মহিদ উদ্দিন এর বর্ণনা দেন। উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত।
ব্রিফিং বলা হয়, সিসিটিভি ফুটেজের কারণেই জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।
সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (বাঁয়ে) ও আবু বক্কর ওরফে মিঠুন
গত শুক্রবার রাত দুইটার দিকে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে এই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হয়।
- আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ভিডিও
ফুটেজে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ওপরে ওঠে। একজনের ব্যাগে থাকা হাতুরি দিয়ে ভাস্কর্য ভেঙে নেমে যায়।
এই ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযানে নামে ডিবি, ডিএসবি ও কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ।
শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়
প্রথমে তারা স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা ইবনে মাসউদের দুই ছাত্রকে আটক করে। তারা এই ফুটেজ দেখে ভাঙচুরকারীদের চেনার কথা জানায়। তাদের বর্ণনা শুনে মাদ্রাসার ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন এবং সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদকে আটক করে পুলিশ।
১৯ বছর বয়সী মিঠুনের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামে। তিনি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে অধ্যয়নরত। অন্যদিকে ২০ বছর বয়সী নাহিদের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর (গোলাবাড়িয়া) এলাকায়।
ডিআইজি খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙচুরকারীরা পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, মাওলানা মামুনুল হক ও ফজলুল করিমের ওয়াজ শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে প্রথমে মাঠে নামেন চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম
এ বিষয়ে জানতে মামুনুল হকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও কল রিসিভ হয়নি।
অন্যদিকে ফয়জুল করীমের দল ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, তারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধী হলেও সেটি কখনো ভেঙে ফেলার কথা বলেননি।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: ‘জড়িতদের আটক’
নিউজবাংলাকে আতাউর রহমান বলেন, ‘পুলিশ কি তাদের রিমান্ডে নিয়েছে বা জবানবন্দি নিয়েছে? তাহলে তারা এ কথা কীভাবে বলল? এই কথার প্রতিক্রিয়ায় আমরা কী জবাব দেব?’
তিনি বলেন, ‘তাছাড়া (ফয়জুল করীম) ওনার বক্তব্য তো রেকর্ড আছে। মামুনুল হক সাহেব কী বলেছেন, না বলেছেন তা শুনিনি, তবে ফয়জুল করীম সাহেব তো কখনও বলেনি মূর্তি (ভাস্কর্য) ভেঙে ফেলো বা আমরা ভেঙে ফেলব। তিনি বলেছেন, দুই পাশে দুটি মসজিদ (ধোলাইপাড়ে) মাঝখানে মূর্তি (বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য) এটা মানুষ পছন্দ করছে না।… তাছাড়া বাংলাদেশে তো হাজার হাজার মূর্তি (ভাস্কর্য) আছে, ওনি কি বলেছেন, এগুলো ভেঙে ফেলা হোক? কখনও বলেননি।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ হলে আরেকটি শাপলা চত্বর করার ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ১০টায় মাদ্রাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তারা গোপনে বের হয়ে আসেন। দীর্ঘ পথ হেঁটে তারা ভাস্কর্যের কাছে আসে। ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মই দিয়ে উঠে হাতুরি বের করে ভাঙচুর চালায়। এরপর আবার হেঁটে গিয়ে মাদ্রাসায় ঘুমিয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, দুই ছাত্র সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের দুই শিক্ষককে ঘটনাটি খুলে বলেন। তখন তাদেরকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ওই দুই শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন।
পরে বিরোধিতায় নামে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন, ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে ২০১৩ সালের ৫ মের মতো আরও একটি ঘটনা ঘটাবেন তারা।
এই বক্তব্য দিয়ে অবশ্য প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন মামুনুল। ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজপথে অবস্থানের কারণে গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি মাহফিলে যোগ দেননি তিনি। আর দেশের নানাস্থানে তার মাহফিল বাতিল হয়েছে।
আরও পড়ুন: মামুনুলের নরম সুর
এর মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে সুর নরম করেছেন মামুনুল। বলেছেন, তিনি ভাস্কর্যবিরোধী হলেও সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে ‘যুদ্ধে যাবেন না।’