বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকদের বক্তব্য ও কার্যকলাপ রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন একজন আইনজীবী।
আবেদন করা জিশান মাহমুদ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপ আইন সম্পাদক।
এই সংগঠনটিই ভাস্কর্যবিরোধীদের শাস্তি চেয়ে দেশজুড়ে প্রথম কর্মসূচি পালন করেছিল।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জিশান মাহমুদ।
রাষ্ট্রেদ্রোহের অভিযোগ আমলে নিতে হলে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।
আবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অপর নাম। তার ভাস্কর্যে আঘাত হানা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। মামুনুল হক ও বাবুনগরীদের প্রত্যক্ষ মদদে এই কাজ করেছ দুবৃর্ত্তরা।
এই ধরনের কার্যকলাপ রাষ্ট্রের প্রতি বিরাগ ও ঘৃণা সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, বাবুনগরীরা দণ্ডবিধির ১২৩, ১২৪ ক এবং ৫০৫ ধারার আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে হুমকি দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক
দণ্ডবিধির ১২৩ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড দণ্ডনীয়।
১২৪ ক ধারা অনুযায়ী, বক্তব্যের মাধ্যমে সরকারের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা দণ্ডনীয়।
৫০৫ ধারা অনুযায়ী, কর্মকাণ্ড, বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনশান্তি বিনষ্ট করার জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করাও দণ্ডনীয়।
আবেদনে বলা হয়, গত ১৩ নভেম্বর খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হক ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন।
২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাহফিলে বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে।
৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্যের ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডল এবং বা হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব দেওয়ার মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এই ধরনের কোনো আবেদন আসেনি।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি ভাস্কর্য ইসলাম অনুমোদন করে না।
যদিও তাদের বিরোধিতার মধ্য তুরস্কে এরদোয়ান সরকার জানিয়েছে, তারা তাদের অর্থ বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের একটি ভাস্কর্য নির্মাণ হবে বাংলাদেশে। এর অর্থ দেবে তুরস্ক।
এই দেশটির প্রতি মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। আর এরদোয়ান বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের মধ্যেও জনপ্রিয়। তার দেশ যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করতে যায়, সেখানে বাংলাদেশ কেন জাতির পিতার ভাস্কর্য করা যাবে না- এমন প্রশ্নে ভাস্কর্যবিরোধীদের এক নেতা বলেছেন, এরদোয়ান না, মক্কা শরিফের ইমাম বললেও তারা শুনবেন না।