ভাস্কর্যবিরোধী উগ্রবাদীদের হুঁশিয়ার করে তাদের থামতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার সকালে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে আক্রমণ করে না, তবে আক্রমণের শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এক বিন্দুও পিছপা হয় না। অনেক হয়েছে, এবার থামুন।’
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। যারাই জড়িত ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শাস্তি পেতেই হবে।’
ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশব্যাপী ধর্মীয় বিভেদ তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের।
সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দিয়েছিলেন ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করবেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল
শুধু মামুনুল নন, ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরীও। জানান, যে দলই ভাস্কর্য বসাক তা টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে।
এসবের মধ্যেই গত শুক্রবার মাঝরাতে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ উঠেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি প্রদর্শণ ও সংরক্ষণ সাংবিধানিকভাবেই বিধিবদ্ধ বিষয়, তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা প্রকারান্তরে সংবিধানের অবমাননা।
‘বঙ্গবন্ধু মানে এদেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা; বঙ্গবন্ধু মানে দেশ এবং সংবিধান। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা মানে দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আক্রান্ত করা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুদার ভাস্কর্যের আংশিক ভাঙচুরের ঘটনারও তীব্র নিন্দা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেবেন না।
‘এখনও দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আবারও বাড়াবাড়ি করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না।’
মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান সকলের মিলিত রক্তের স্রোতধারায় অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এ স্বাধীনতা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের স্বার্থের কাছে জিম্মি হতে দেয়া হনে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
‘পবিত্র সংবিধান ও দেশের আইন পরিপন্থী কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, মন্তব্য ও আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।’
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল ফারক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শিল্পমন্ত্রী নুরল মজিদ হুমায়ুন, জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলীসহ নেতৃবৃন্দ।