বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বলেছেন, তারা যদি নিজেদের শক্তিশালী মনে করে তাহলে তারা ভুল করবে।
মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, সরকার কারও প্রতি নমনীয় না।
গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তা মোড়ে জাতির পিতার নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি জানান, চার মাদ্রাসা ছাত্র হলেন আবু বকর, নাহিদ, আলামীন ও ইউসূফ।
এই ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর গত কয়েক বছর ধরে ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের নমনীয় মনোভাবের বিষয়টি সামনে এনে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতায় ঢাকার বিমানবন্দর মোড়ে লালনের ভাস্কর্য স্থাপন হয়নি।
বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়া হয় কওমি ছাত্র-শিক্ষকদের বিরোধিতার কারণে।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে যা হচ্ছে, সেটা এই দুই ঘটনার ধারাবাহিকতা। সরকার সে সময় নমনীয় থাকায় এখন তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করছে এমনকি একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরও করেছে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করে তারা অনেক শক্তিশালী হয়েছে, সেটা ভুল।’
তিনি বলেন, ‘সরকার কারও প্রতি নমনীয় না। আমাদের সামনে যে ঘটনা আসছে, সেটা আমরা দেখছি।’
সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ভাস্কর্যের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। আমরা কাউকে বাড়াবাড়ি করতে দিই না। আমরা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই।’
বাংলাদেশে জাতির পিতার ভাস্কর্যের অভাব নেই। তবে ঢাকার ধোলাইপাড়ে নতুন একটি ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে হঠাৎই উত্তেজিত হয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রথমে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। পরে সক্রিয় হয় হেফাজতে ইসলাম।
শুরুতে হুমকি দেয়া হয় ভাস্কর্য নির্মাণ হলে সেটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। পরে বলা হয়, নির্মাণ হলে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে।
শুরুতে সরকারি দল চুপ থাকলেও চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ‘ঘাড় মটকে দেয়ার হুমকি’ ও তার সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের মাহফিলে যোগ দিতে না পারার পর সোচ্চার হয় ক্ষমতাসীন দল।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মাথা গরম না করার আহ্বান জানান শনিবার। তবে এর কিছুক্ষণের মধ্যে কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙার খবর আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।