দেশে গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত ও ৬৮২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, নভেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১৭টি। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নভেম্বর মাসে সারা দেশে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৪১ জন, যা মোট নিহতের ৩২.১১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩০.৬৯ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৬.৪২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৪৯ জন, যা মোট নিহতের ১১.১৬ শতাংশ।
সংস্থাটি জানায়, দুর্ঘটনায় ৩০ বাসযাত্রী, ৮ ট্রাকযাত্রী, ১১ পিকআপ যাত্রী, ৪ মাইক্রোবাসযাত্রী, ৯ অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী, ২ ট্রলিযাত্রী, ৩ লরি, ১২ সিএনজি যাত্রী, ৬২ ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী, ২৮ নসিমন-ভটভটি-টেম্পু যাত্রী, ২ বাই-সাইকেল আরোহী, ৬ রিকশা-রিকশাভ্যান যাত্রী, ২ স্কুলভ্যান এবং ৩ পাওয়ারটিলার-আলগামন যাত্রী নিহত হয়েছে।
অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। অক্টোবর মাসে ৩১৪টি দুর্ঘটনায় ৩৮৩ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে নভেম্বর মাসে দুর্ঘটনা ৩২.৮০ শতাংশ এবং প্রাণহানি ১৪.৬২ শতাংশ বেড়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, ব্রেক করলে ব্রেক হয় না, বডি ঠিক নাই, এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারণেই সাধারণত দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। পরিবহন আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগই নাই। দেশে প্রায় ২০ লক্ষ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। তারা লাইসেন্সের আবেদন করেছেন দুই বছর আগে; তাদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না।
‘তারা লাইসেন্স আনতে গেলে একটা সিল মেরে বলেন ছয়-নয় মাস পরে আসেন। তাদের কাছে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লাইসেন্স না দেওয়ার কারণ কী? উত্তরে তারা বলেন লাইসেন্স ছাপানোর জন্য যে কার্ড লাগে সেই কার্ডটাই নাই। কার্ড আমদানি করতে কত বছর লাগে সরকারের?’
তিনি আরও বলেন, ‘তা ছাড়া রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে চাঁদাবাজি করছে। এই চাঁদা নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নাই। রাস্তা হয় জনগণের টাকায়, তাহলে এখানে কেন চাঁদাবাজি? বাসস্ট্যান্ডে-টেম্পু স্ট্যান্ডে চাঁদা নিচ্ছে, পুলিশ-ট্রাফিক চাঁদা নিচ্ছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা চাঁদা নিচ্ছে। আমাদের ট্রাফিক আইন আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন নাই।’
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে। এ বিভাগে ১১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২৮ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয় সিলেট বিভাগে। সেখানে ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৪ জন।
একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে। ২৬টি দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হয়। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটে ভোলা জেলায়। সেখানে তিনটি দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়।
দুর্ঘটনার কারণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তিতে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশ
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বেশ কিছু সুপারিশ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।