‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুরস্কৃত করেছেন, এ জন্য আমি খুবই আনন্দিত। তবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কারটি নিতে পারলে আমার অনেক বেশি ভালো লাগত। বুঝি যে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবুও...।’
কথাগুলো বলছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ইতিহাসে মৌলিক প্রশিক্ষণের ফায়ারিং বিভাগে (নারী ও পুরুষ) প্রথমবারের মতো নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা হাসিনা আক্তার বিথি।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শনিবার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেখানে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ফলে দেশের চার বারের নারী প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সরাসরি ক্রেস্ট নেয়ার সুযোগ হয়নি বিথির। এই আক্ষেপ রয়ে গেছে তার মনের কোণে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বিথির হাতে ক্রেস্ট তুলে দিয়েছেন।
সাতকানিয়ায় বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচে বিথিসহ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৭৯১ জন। তাদের মধ্যে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী।
বিজিটিসিঅ্যান্ডসি ছাড়াও আরও ছয়টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের ১ হাজার ৭৩৩ জন রিক্রুটসহ ২ হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মাদারীপুরের মো. খোকন মোল্লা। আর প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ ফায়ারিং বিভাগে প্রথম হয়েছেন বিথি।
শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হওয়ায় বিথিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুচকাওয়াজ সমাপনী অনুষ্ঠানে বিথির অর্জনে খুশি হয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েরা যে ভালো ফায়ার পারে, এটিই প্রমাণ হলো। আর নামটাও আমার নামে, তাই আনন্দ হচ্ছে।’
২০১৬ সাল থেকে সৈনিক হিসেবে নারীদের নিয়োগ শুরু করে বিজিবি। ৮৮তম ব্যাচ থেকে নারীদের নিয়োগ শুরুর পর ৯৪তম ব্যাচ পর্যন্ত কোনও নারী ফায়ারিং বিভাগে প্রথম হতে পারেননি। তবে ৯৫তম ব্যাচের বিথি শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হয়ে দেখিয়েছেন, নারীরাও পারে।
কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতার কারণে প্রথম হতে পেরেছেন বলে জানান বিথি। চেষ্টা থাকলে নারীরাও তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সবাই সমান। নারী কেন পারবে না? চেষ্টা থাকলে নারীরাও তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
‘ফায়ারিং প্রশিক্ষণের সময় আমি নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করেছি। স্টাফ স্যারজীদের (প্রশিক্ষক) নির্দেশ মেনে প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরি করতে ব্যস্ত থেকেছি। আর এটাই ছিল আমার চ্যালেঞ্জ।’
হাসিনা আক্তার বিথির বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলায়। তিনি চরমধুয়া আদর্শ বিদ্যা নিকেতন থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি (মানবিক) ও চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি (মানবিক) পাস করেন। এরপর দর্শন বিষয় নিয়ে অনার্সে ভর্তি হন শেরপুর মহিলা কলেজে।
প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায় বিজিবিতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন বিথি। তিনি বিজিবির জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নে (১৯ বিজিবি) যোগ দেন।
দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট বিথি। বিজিবিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে কৃষক বাবার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।