কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাতের আধারে মৌলবদীরাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। তারা দেশের শত্রু। তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে।
শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাম হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
ঢাকাশনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিক্ষোভ করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ।বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে মশাল মিছিল নিয়ে বের হন নেতা-কর্মীরা।
চট্টগ্রাম সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি মোড় থেকে শুরু হয়ে দুই নম্বর গেট ঘুরে আবারও জিইসি মোড়ে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষ। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এতে আর ঘরে বসে থাকা যায় না। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মৌলবাদীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা হবে।’তিনি বলেন, ‘এই মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
যশোরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধন। ছবি: নিউজবাংলা
গাজীপুর রাত আটটার দিকে গাজীপুর সদর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর যুবলীগ।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গীতে হয় আরেকটি মিছিল। মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এতে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
যশোরবিকেল চারটার দিকে শহরের দড়াটানায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মানববন্ধন করে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, পূজা উদ্যাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধনে অংশ নেয়।
সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি সাজেদ রহমান বকুল বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোমতেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।’
একই সময় জেলা জাসদ যশোর শহরের সুভাষ বসু সড়কের নিজ কার্যলয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। জেলা জাসদের সভাপতি রবিউল আলম বলেন, 'সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।'
পৌর আওয়ামী লীগ সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী অংশ নেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মীরা সন্ধ্যায় সেখানে মিছিল ও সমাবেশ করে।
মানিকগঞ্জ
রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা যুবলীগের উদ্যোগে শহরের শহীদ রফিক সড়কে মিছিল বের করা হয়। পরে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে হয় সমাবেশ।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, আজ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা কোনোদিন বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে তাদের কঠিন হাতে প্রতিহত করতে হবে।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে, তাদের বাংলাদেশে থাকার অধিকার নেই। তাদের বাংলার মাটিতে থাকতে দেয়া হবে না।’
নাটোর
রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মিছিল বের হয়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে হয় সমাবেশ। একই সময়ে জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিছিল বের করে। তারাও প্রেসক্লাবের সামনে সভায় মিলিত হয়।
বক্তারা বলেন, রাতের আধারে যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তারা দেশের শত্রু। এদের দ্রুত প্রতিহত করা প্রয়োজন।
কিশোরগঞ্জসন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদীর নেতৃত্বে শহরের জেলা সরণির মোড় থেকে দলের মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি মিছিল সমাবেশে গিয়ে মিলিত হয়।
সমাবেশে অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইব্রাহীম খলিল, সদর উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি কামাল পাশা, শহর কৃষকলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাভেল শার্ফি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খান, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
এদিকে, জেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মীর আমিনুল ইসলাম সোহেল, যুবলীগ নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম হুমায়ুন ও সানোয়ার হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে যুবলীগও শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
মানিকগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: নিউজবাংলা
ফরিদপুরসন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় আলিপুর মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু প্রমূখ।সভা থেকে বক্তারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিক্ষোভ মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মেহেরপুর শনিবার রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের সময় জেলা যুবলীগের উদ্যোগে মেহেরপুর পৌরহলের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে এসে মিছিল শেষ হয়।
পরে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেন মিদুলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ পথসভায় বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম।
রাত ১০ টা ১৫ মিনিটের দিকে আরও একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয় মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটনের উদ্যোগে। এই মিছিলটিও শহর প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভার সামনে এসে শেষ হয়।
{প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সিফায়াত উল্লাহ, চট্টগ্রাম, নাজমুল হাসান, নাটোর, পলাশ প্রধান, গাজীপুর, রাকিবুল হাসান রোকেল, কিশোরগঞ্জ, আজিজুল হাকিম, মানিকগঞ্জ, নিশাত বিজয়, যশোর ও সোহেল রানা বাবু, মেহেরপুর}