কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে সেখানে অতর্কিত গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ধারণা, ভাস্কর্য ভাঙচুরে যারা জড়িত তারাই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
যারা গুলি করেছে, তারা ভাস্কর্যটির পাশে কালো পতাকা বেঁধে রেখে গেছে।
পাঁচ রাস্তার মোড়ের কয়েকজন দোকানি জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর একটি ছাই রঙয়ের মাইক্রোবাসে কয়েকজন এসে পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যস্থলে থামে।
এ সময় অস্ত্র হাতে কয়েকজন নেমে আসে। তাদের দুই জন দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছোটাছুটি শুরু করে। অস্ত্রধারীরা অপেক্ষা না করে গাড়িতে উঠে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যস্থলে একটি বাঁশের সঙ্গে কালো পতাকা বাঁধা দেখা যায়।
রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধুর ভাঙচুর করা ভাস্কর্যস্থলে গুলির খবরে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক এ কে এম নাহিদুল ইসলাম
এ সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ কে এম নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে তারাই এই গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত দিয়ে দুর্বৃত্তরা আমাদের প্রাণে আঘাত করেছে। এদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আইনি প্রক্রিয়ায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
গত রাতে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়
শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের হাত ও মুখ ভাঙচুর করা হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, দুই জন যুবক রাত দুইটার দিকে এসে এই ভাঙচুর চালিয়েছে। ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, এই ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জেলায় সব ভাস্কর্যকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এর মধ্যেই দুর্বৃত্তদের গুলির বিষয়টি কীভাবে হলো, এটা নিয়ে জেলায় আলোচনা চলছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের আপত্তিকর নানা বক্তব্যের মধ্যে কুষ্টিয়ার এই ঘটনাটি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের। এর প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘ভাঙচুরের নমুনা দেখেই বোঝা যায়, এটি মৌলবাদীদের কাজ। বঙ্গবন্ধুর এই বাংলায় মৌলবাদীদের ঠাঁই নাই।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে ওরা এই বাংলাদেশকে মানেনি। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ওই মৌলবাদীদের চিহ্নিত করে একে একে ধরে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করব। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগে আলোচনা চলছে, প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাব আমরা।’