কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ভিডিও পেয়েছে পুলিশ। তাদের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও বেশভূষা মাদ্রাসা ছাত্রদের মতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।ভিডিও দেখে পুলিশের অনুমান, ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বাহিনীটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। ভাস্কর্যের কাছেই সিটি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার অফিসের সামনে বসানো ছিল সিসি ক্যামেরাটি। ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২টা পাঁচ মিনিটের সময় পাঁচ রাস্তার মোড়ে ভাস্কর্যের কাছে যান পাজামা পাঞ্জাবি পরা দুই জন। এক জন উপরে উঠে হাতুড়ি জাতীয় কিছু একটা দিয়ে ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন। পুলিশের ধারণা, যারা ভাস্কর্য ভেঙেছে তারা অন্য জেলা অথবা গ্রামাঞ্চল থেকে কুষ্টিয়ায় আসেন। পুলিশ পাঁচ রাস্তার মোড়ের দোকানগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখেছে। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দল। প্রথমে হুমকি দেয়া হয়, ভাস্কর্য হলে সেটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। পরে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ভাস্কর্য হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।শুরুতে আওয়ামী লীগ চুপ থাকলেও পরে বিষয়টি নিয়ে তারা সোচ্চার হয়। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনগুলো ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে। আর এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্যের সুর নরম হয়েছে। যদিও তারা ভাস্কর্যবিরোধিতা অব্যাহত রেখেছেন।আওয়ামী লীগের যে নেতারা সবচেয়ে কড়া বক্তব্য রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি ভাস্কর্য নিয়ে চিন্তা না করে মাদ্রাসায় বলাৎকারের সমস্যা নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন।নিজ নির্বাচনি এলাকায় জাতির পিতার ভাস্কর্য রাতের আঁধারে ভাঙার ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হানিফ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অন্ধকারে চোরের মতো গিয়ে যারা ভাস্কর্য ভেঙেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ রাতের আঁধারে কোনো ভাস্কর্যের ক্ষতি না করতে পারে।’সংসদ সদস্য হানিফ বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে মাদ্রাসা ছাত্র বলেই মনে হয়েছে। পাঞ্জাবি পরা অবস্থায় ছিল দুই জন। এদের শনাক্ত করা হচ্ছে, পুলিশ তদন্ত করছে।’জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভাস্কর্যবিরোধী রাজনৈতিক মোল্লারা কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য যে চক্রান্ত শুরু করেছে তার অংশ হিসেবে কুষ্টিয়ার এই ঘটনা ঘটেছে।
‘মধুর ক্যান্টিনের ঘটনা, কুষ্টিয়ার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভাস্কর্যবিরোধী রাজনৈতিক মোল্লাদের পরিকল্পিত আক্রমণের অংশ। সুতরাং এটাকে শক্তভাবেই দমন করা উচিত।’