হাইকোর্টের নির্দেশে বিমানবন্দর, বাসস্টেশন, রেলওয়ে স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার করা হলেও সুপ্রিম কোর্টেই করা হয়নি। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টে সন্তান নিয়ে আসা বিচারপ্রার্থী নারীরা।
হাইকোর্টের আদেশের এক বছরেও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তৈরি না হওয়া দুঃখজনক বিষয় বলেছেন আইনজীবীরা। আর ভোগান্তির শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, হাইকোর্টের আদেশ মানছে না সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রোকসানা শিরিন হাইকোর্টের বারান্দায় বসে বিচারপ্রার্থী এক মায়ের সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘এটা অন্য কোনো জায়গার চিত্র না...আমাদের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের চিত্র!
‘হাইকোর্টের আদেশেই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, টার্মিনালে, হাসপাতালে মাতৃদুগ্ধ কর্নার স্থাপন করা হচ্ছে। অথচ আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আজকের চিত্র এটা।’
হাইকোর্টের নির্দেশে বিমানবন্দর, বাসস্টেশন, রেলওয়ে স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় নির্মিত হয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও লিখেন, ‘এই সুপ্রিম কোর্ট চত্বর শুধু আইনজীবীদের জন্য না...এখানে হাজারো ক্লায়েন্ট (মক্কেল) আসেন...পরিস্থিতিতে পরে দুধের শিশুকে নিয়ে মাও আসেন। আমাদের কি আলাদা করে একটা মাতৃদুগ্ধ কর্নার স্থাপন করা যায় না? বিঃদ্রঃ - আমি আমার একান্তই মনের অনুভুতি প্রকাশের মাধ্যমে একটা আর্জি জানালাম...কোনোভাবেই কাউকে ছোটো করার সাহস আমার নাই।’
আইনজীবী রোকসানা শিরিনের এই পোস্ট অনেক আইনজীবী শেয়ার করছেন। অনেকে তার পোস্টে কমেন্টও করেছেন।
আরেক আইনজীবী মনির হোসেন লিখেছেন, ‘দেশের প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা প্রয়োজন। কেননা এই মায়েরা মামলার কাজে কোর্টে এসে শিশুকে খাওয়াতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।’
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান নিউজবাংলাকে জানান, আদেশের জন্য অপেক্ষায় থাকা নয় বরং নিজে থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এটি করা উচিত ছিল। কিন্তু এখনও না করার বিষয়টি দুঃখজনক।
দ্রুত এর সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, আইনজীবী সমিতি ভবনে নারী আইনজীবীদের জন্য ডে–কেয়ার এবং কমন রুমের ব্যবস্থা আছে। করোনার কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে।
বিচারপ্রার্থীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘আমাদের যে নতুন ভবন হচ্ছে সেখানে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের ব্যবস্থা থাকবে।’
এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাওয়া হয় রিটের ১৯ নম্বর বিবাদী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবরের কাছে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তবে এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।’
সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিমানবন্দর, বাসস্টেশন, রেলওয়ে স্টেশন, শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি হাইকোর্ট রুলও জারি করে। রুলটি চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে।