শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, কোথায় কী ছবি উঠবে, কোথায় কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে, সেটা দেখা আলেমদের কাজ নয়।শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন উপমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আখতার জাহানের লেখা ‘অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনা’ বইয়ের মোড় উন্মোচন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে দেখি যত উন্নত দেশ, তত উন্নতমানের মুফতি এবং আলেম। তারা আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক সমাজে কীভাবে চলতে হবে, দ্বীন-ইসলামের কীভাবে চর্চা করতে হবে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের নারীসমাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের পিছিয়ে দেয়ার জন্য তথাকথিত কিছু আলেম নামধারী ব্যক্তি উদ্ভট কথা সামনে আনছেন।’
আলেমদের উদ্দেশে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা না করে আপনারা সৃষ্টিশীল এবং সমাজ বিনির্মাণের জন্য, মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য কাজ করুন। এতে আলেম হিসেবে আপনাদের প্রতি আমাদের সম্মান অনেক বেড়ে যাবে।’
যুগের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করার অনুরোধ জানিয়ে আলেমদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি বলেন- মা বোনেরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না, চাকরি করতে পারবে না, টেলিভিশন দেখতে পারবে না, তাহলে সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক কথা। আপনার এসব বলে নিজেদের ছোট করবেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘আলেম সমাজকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই তারা আমাদের সাথে থাকবেন, সমাজের সাথে থাকবেন, প্রগতির সাথে থাকবেন, এগিয়ে যাওয়ার সাথে থাকবেন।’
মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করা হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি মৌলবাদীদের কথায় আপস করে ফেলি তাহলে কী হবে। পৃথিবীর যেসব রাষ্ট্র মৌলবাদীদের কথায় আপস করেছে তাদের অবস্থা আজ আমরা দেখছি।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণে বেদি তৈরি হয়ে গেছে। হঠাৎ মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। এটি নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দেয় তারা।
এরপর হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন আরও একটি শাপলা চত্বর করার। তখনও চুপ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এর মধ্যে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে রাজপথে নেমে মামুনুল হককে মাহফিলে যোগ দেয়া ঠেকিয়ে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা।
২৭ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অষ্টম বষপূর্তির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘মৌলবাদী গোষ্ঠী হুমকি-ধামকি দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি, এরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে।’
এরপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তার আগেই দেশজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মাঠে নামে যুবলীগ। ছাত্রলীগ তখন কয়েকদিন ধরেই ভাস্কর্যবিরোধীদের সতর্ক করে নানা কর্মসূচি পালন করে।
রাজধানীতে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভাস্কর্যবিরোধী মিছিল করার চেষ্টা লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।