বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্প্যান বসল, এরপর কী?

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:৪০

স্প্যান বসানোর পর তিন দিন সময় লাগে এর সংযোগ টেকসই করতে। দ্বিতল সেতুর আরও অনেক কাজ আছে। নিচের অংশে চলছে রেলের কাজ। ওপরের অংশে আগাচ্ছে সড়ক তৈরির কাজ।

ভারী ক্রেনে ঝুলতে থাকা স্প্যানটি বসানো হলো নির্ধারিত স্থানে। সময় লেগেছে ঘণ্টারও বেশি। ৪০তম স্প্যানটি যুক্ত করলো ১১ ও ১২ নম্বর পিলারকে। আর তাতে দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ছয় কিলোমিটার। আর প্রমত্তা পদ্মা জয়ের দ্বারে পৌঁছল বাংলাদেশ।

 

 

স্প্যান তো বসানো হলো। কিন্তু বসানো মাত্রই কাজ শেষ হবার জো নেই। বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংযোগ প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত সপ্তাহ খানেক সময় লাগে।

নির্মাণ শ্রমিকদের একজন জালাল বললেন, ‘নতুন স্প্যান যেটা বসানো হলো, এটার চার মাথার ১৬টি পাশ আছে। গ্যাস কাটিং দিয়ে এগুলো কাটা হবে। এরপর গ্রান্টিং করে ফিনিশিং করবে।’

তার কথা অনুযায়ী দুই স্প্যানের সংযোগস্থলে রাখা হয় ইঞ্চিখানেক ফাঁকা অংশ। যার চতুর্দিকে ওয়েল্ডিং করে ভরাট করা হবে। এত নিঁখুতভাবে কাজটা করা হয়, যাতে বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় না থাকে।

জলিল বলেন, ‘ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেষ হতে দুদিন সময় লেগে যায়। আর গ্রান্টিং করতে চলে যায় একদিন।’

সংযোগস্থলকে মজবুত, টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে আরও কিছু প্রকৌশলগত কাজের কথাও জানান তিনি।

১১ ও ১২ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৪০তম স্প্যান। ছবি: নিউজবাংলা

জালাল বলেন, ‘একটা স্প্যান জোড়া দিতেই ৬-৭ দিন লেগে যায়। আগে সময় আরও বেশি লাগতো। এখন সবকিছু রেডি আছে, কাজটাও দ্রুততার সঙ্গে করতে চায় বলে, এখন অল্প দিনে হয়ে যাচ্ছে। তিনদিনের কাজ একদিনে শেষ করা যাচ্ছে।’

সংযোগের কাজ শেষ হলে, স্প্যানের গায়ে দেয়া রঙের মান ঠিক আছে কি-না সেটাও দেখা হয় বেশ গুরুত্ব দিয়ে। বাহ্যিক সৌন্দর্র পাশাপাশি স্প্যানগুলোকে আবহাওয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখাটা মূল লক্ষ্য। বিষয়টি নিয়ে পেইন্টিং বিভাগের মান নিয়ন্ত্রকের সঙ্গেও কথা হয় নিউজবাংলার। আব্দুল মালেক বললেন, স্প্যান বসানোর পর পেইন্টিং কোয়ালিটি সেকশনের রিপেয়ারিং কাজ হবে। কাজ চলতে থাকে সবসময়।’

মালেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি স্প্যানের গায়ে তিনবার রঙ দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ফার্ট কোড, সেকেন্ড কোড শেষ করে দেয়া হয়, ফাইনাল কোডের রঙ। আপনারা যে রঙটা দেখতে পাচ্ছেন এটা ফাইনালে কোডের রঙ।’

মালেক জানান, যান চলাচল শুরু হয়ে গেলেও এই রিপেয়ারিংয়ের কাজ চলতে থাকবে।

স্প্যান বসানোর শেষ মুহূর্ত। ছবি: নিউজবাংলা

স্প্যান বসানোর খবর পেয়ে অনেকেই স্পিডবোটে করে আসেন মাঝ পদ্মায়। তাদের একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এসএ আরিফিন। ঢাকার উত্তরা থেকে সচক্ষে স্প্যান বসানোর দৃশ্য দেখতে আসেন তিনি।

আরিফিন বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এই প্রকল্প থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে আজকে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এটা যে কতো বড় গর্ব! প্রমাণ হলো আমরা পারি, বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এত বড় প্রকল্প শেষ করতে পারি।’

আর বাকি থাকল ১৫০ মিটার। বিজয় দিবসের আগেই সবশেষ ৪১ তম স্প্যানটি বসানো হবে। যার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটির মূল কাঠামো তৈরির কাজ।

আরিফিনের মতো রোকন-উজ-জামানও এসেছিলেন দৃশ্যটি দেখতে। তার মতে, সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। আর রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের পথ সুগম হবে।

তিনি বলেন ‘দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের যে ভোগান্তিটা আছে, এই সেতু চালু হলে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না।’

জোরেশোরে চলছে কাজ সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের কাজ

পদ্মাসেতুর ১৩ নম্বর পিলার বেয়ে উপরে উঠার সুযোগ হয় নিউজবাংলার। দেখা যায়, পদ্মার বুকে গৌরবের প্রতীক হয়ে নির্মাণাধীন এই সেতুর দ্রুত চালু করতে বেশ বেশ জোরেশোরে চলছে কাজ।

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির মূল আকৃতি দ্বিতল। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোতে থাকছে কংক্রিট ও স্টিল। সেতুর ওপরের অংশে তৈরি হচ্ছে সড়ক পথ। সেতুর সড়ক তৈরির কাজে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯২৭টি রোড স্ল্যাব। এরইমধ্যে বসানো হয়েছে এক হাজার দুইশোটির বেশি স্ল্যাব। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শ্রমিকরা নিরলস প্ররিশ্রম করে যাচ্ছে।

ক্রেনে করে পিলারে তোলা হচ্ছে স্প্যান

থেমে নেই নিচ তলায় রেলপথ নির্মাণ কাজ। সেতুর নিচ তলায় এসে দেখা যায়, লোহার রডের কাঠামো তৈরি করে দেয়া হয়েছে কংক্রিটের ঢালাই। সেগুলো ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

রেলপথ তৈরিতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯২৭টি রোড স্ল্যাব। এক হাজার আটশটিরও বেশি স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ।

৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু। আর এটি নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজটি করছে ওই দেশেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বরে সেতুর মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়।

২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। শুরুতে তিন চার মাস পর পর স্প্যান বসানো হতো। তবে ২০১৮ সাল থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি। প্রতি মাসে একাধিক স্প্যান বসাতে সক্ষম হয় সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।

সবশেষ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে করোনার হানায় আবার ধীরগতি তৈরি হয় কাজে। যদিও তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর