রিকশাচালক বা ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে সহজ-সরল মানুষকে বিদেশি মুদ্রা ভাঙানোর লোভ দেখিয়ে ভুয়া ডিবি পুলিশের মাধ্যমে ফোনসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়ায় জড়িত একটি চক্রের ১০ জন গ্রেফতার হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) লালবাগ বিভাগ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করে বলে জানানো হয়েছে শুক্রবার।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মহসিন শেখ (৩০), আনিছুর রহমান (৫০), সেন্টু মুন্সি (৪০), জুয়েল মিয়া (৩০), শাহিন শেখ (২৫), মহব্বত শেখ (৩২), আবুল কালাম (৫০), সুলতান মোল্লা (৩৪), হেমায়েত শেখ (৫৫) ও কাইয়ুম শেখ (৪৫)।
তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, ডিবি লেখা জ্যাকেট, ওয়ারলেস সেট, হাতকরা ও পুলিশ লেখা স্টিকার উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। তিনি জানান, ঢাকা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কখনো রিকশাচালক, কখনো ফেরিওয়ালা সেজে চক্রের সদস্যরা সহজ-সরল মানুষদের বলেন যে, তারা রাস্তায় বিদেশি মুদ্রা রিয়েল পেয়েছেন। কিন্তু তারা অশিক্ষিত বিধায় ভাঙাতে পারছেন না; ভাঙিয়ে দিলে কিছু টাকা দিবেন।
উপকার হবে ভেবে ওইসব লোক রিয়েল ভাঙিয়ে দিলে তারা তাদের ফোন নম্বর নেন। পরবর্তীতে ফোনে যোগাযোগ করে জানান যে, তাদের কাছে আরও রিয়েল আছে; সেগুলি অর্ধেক দামে বেচবেন। রিকশাচালক বা ফেরিওয়ালার বেশধারীদের এমন প্রলোভনে কেউ রাজি হলে টাকা নিয়ে তাদের পছন্দমতো জায়গায় নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে তাদের আসতে বলেন।
তিনি বলেন, 'চক্রের অপর একটি দল ডিবি সাজে সেই তারিখ ও সময়ে সেই স্থানে পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, হাতকরাসহ মাইক্রোবাস বা একাধিক প্রাইভেটকারে অপেক্ষা করতে থাকে।'
রিকশাচালক বা ফেরিওয়ালার বেশে কাপড়ে মুড়িয়ে রিয়েলের নামে কাগজ বা অন্য কোনো জিনিস নিয়ে সেখানে হাজির হন তারা। ক্রেতাকে রিয়েল বুঝিয়ে টাকা নিয়ে বলেন, পুলিশ আসছে- তাড়াতাড়ি চলে যান।
একথা বলে রিয়েল বিক্রেতা টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। রিয়েল ক্রেতা একটু এগুলেই ওঁৎ পেতে থাকা ভুয়া ডিবি দলের সদস্যরা তাকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নেন। তার কাছে অবৈধ রিয়েল আছে- অভিযোগ করে মামলা করার বা খবর মিডিয়ায় প্রচারের ভয় দেখান।
এরপর তার কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিস থাকলে তা ছিনিয়ে নেন। এটিএম কার্ড থাকলে বুথ থেকে টাকা তুলে নেন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও তার টাকা নিয়ে নেন। এরপর সুবিধাজনক স্থানে তাকে নামিয়ে তারা চলে যান।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুর রহমান জানান, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন যে, ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ ধরনের অনেক চক্র আছে। তাদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।