বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজাকারের তালিকা তৈরি করবে কে

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:৩৮

২০১৯ সালে রাজাকারের একটি আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যা ছিল ভুলে ভরা। সেটি প্রত্যাহারের পর আবার তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।   

সমালোচনার মুখে পিছু হটলেও, আবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা করতে যাচ্ছে সরকার। এবার আর মন্ত্রণালয় তালিকা তৈরি করবে না।

রাজাকারের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা)। তবে এ জন্য সংশোধন করতে হবে জামুকা আইন। পরের অধিবেশনেই সংসদে তোলা হচ্ছে এই আইনের সংশোধন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল যেমন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করছে, একইভাবে রাজাকারের তালিকাও তারা করবে। সে আইন আগামী সেশনে পার্লামেন্টে উঠবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা করার জন্য আইনগতভাবে কোনো কর্তৃপক্ষকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি। আমরা আইন সংশোধন করতে যাচ্ছি অচিরেই।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে একটি কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০২ সালে প্রণয়ন করা হয় জামুকা আইন। এই আইনের অধীনেই চলছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির কাজ। আইন সংশোধন করে, সেখানে সংযুক্ত করা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরির দায়িত্বটিও।

১৬ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়া রাজাকার

২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বলা হয়, সরকারের নথিপত্র ঘেঁটে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে তালিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর বেতনভোগী ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতা বিরোধীর নাম ছিল ওই তালিকায়।

কিন্তু তালিকাটি ছিল ভুলে ভরা। এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামও উঠে আসে ওই রাজাকারের তালিকায়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। কদিনের মধ্যে তালিকা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বছরের জানুয়ারিতে সংসদেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। নিজ দলের সংসদ সদস্যরাও সমালোচনা করতে ছাড়নেনি মন্ত্রীকে। পরে নতুন করে তালিকা তৈরির কথা জানান মন্ত্রী।

রাজাকারের নির্ভুল তালিকা তৈরিতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংসদীয় কমিটি। এ জন্য একটি ছয় সদস্যের উপ-কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এ বছরের ৯ আগস্ট সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাহজাহান খানকেই উপ-কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়। 

ওই সময় উপ-কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন, রাজাকারের তালিকা তৈরিতে তাদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও সহযোগিতা নিয়ে প্রণয়ন করা হবে তালিকা।

কাজের অগ্রগতি জানতে উপ-কমিটির অন্তত ৫ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে নিউজবাংলা। বার বার ফোন দিয়ে এসএমএস পাঠিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান খানের সঙ্গে। ফোন ধরেননি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।

আর অগ্রগতির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই কমিটির অপর দুই সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এবং এ বি তাজুল ইসলামের কাছে।

উপ-কমিটির তৎপরতা না থাকলেও মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগে আইন সংশোধন করে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা করতে যাচ্ছে।

তালিকা হলে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না-জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না। তবে কোনো ব্যক্তিবিশেষ উদ্যোগী হলে মামলা করার সুযোগ থাকবে।

তিনি বলেন, ‘তালিকা প্রনয়নের পর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে কেউ মামলা করতে পারবে। গড়ে সবার নামে মামলা করব, সেটা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব না। মামলা করলেই তো হবে না, তার অপরাধের সাক্ষ্য প্রমাণ লাগবে।’

মন্ত্রী জানান, ‘যিনি বাদী হবেন তাকেই সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মুক্তিযোদ্ধারা সহযোগিতা করবে।’

মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধীতাকারীদের তালিকা রাজাকারের তালিকা নামেই বেশি পরিচিত। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে বাংলাদেশের ভেতরে বেশ কয়েকটি বাহিনী বা সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে আছে: শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস। এরা সরাসরি পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করত। এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে।

রাজাকারদের ধরে শাস্তি দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ জারি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা দালাল আইন নামে পরিচিত। আইনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের বিরোধিতা করেছে তারাই দালাল। এ আইনের আওতায় সাড়ে ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে আটক করে বিচার শুরু হয়। যাচাই-বাছাইয়ে শেষ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৫২ জনের বিচার হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দালাল আইন বাতিল করেন জেনারেল জিয়া। মুক্তি পায় কারাগারে থাকা ১১ হাজারের মতো যুদ্ধাপরাধী।

এরপর অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। নবম সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রতিশ্রুতি দেয়া আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। ২০১০ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিন যুগ পর আবার শুরু হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার।

২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে উন্মোচিত হয় নতুন দিগন্ত। যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর ২০১৩ সালে ৪১টি মামলার রায় এসেছে। এখন পর্যন্ত এ ট্রাইব্যুনালে সাজা হয়েছে ৯৫ জনের নানা মেয়াদে সাজা হয়েছে, যার মধ্যে ৭০ জনের মৃত্যুদণ্ড। এ পর্যন্ত ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। টাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২৮টি মামলার তদন্ত চলছে। যেখানে আসামি সংখ্যা ৪০ জন।

এ বিভাগের আরো খবর