বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছুটির দিনে সড়কে ঝরল ১৯ প্রাণ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:০৮

নিহতদের মধ্যে ৬ জন একই পরিবারের। তারা সবাই সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রী। ছয় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। গুরুতরদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ছুটির দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের ছয় জনের প্রাণ গেছে মানিকগঞ্জে। টাঙ্গাইলে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে বাসের ছয় যাত্রীর। এ দুটি দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। স্থানীয় হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বাস-সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে সাত জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কয়েকজন।

শুক্রবার বিকেলে দৌলতপুরের মুলকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- ঢুলি হরেকৃষ্ণ মনি দাস (৫০), তার ছেলে গোবিন্দ মনি দাস, পুত্রবধূ ববিতা মনি দাস (২৪), নাতনি চার বছরের মেয়ে শিশু রাধে, হরেকৃষ্ণের মা খুকি বালা (৬৫), স্বজন রাম প্রসাদ (২৬) ও চালক জামাল শেখ (৩০)।

 

 

দৌলতপুর থানার ওসি রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে জানান, নাগরপুরের ভাদ্রা স্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশাতে করে হরেকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ ভিলেজ লাইনের একটি বাস সঙ্গে তাদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অটোরিকশার সব যাত্রী।  

এই দুর্ঘটনায় বাসের অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে পালিয়ে গেছেন চালক।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মেরামতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বাসে পেছন থেকে ট্রাকের ধাক্কায় অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও পাঁচ জন, এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে চার জন পুরুষ ও দুই জন নারী। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, ট্রাকের হেলপার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শমসের হাট গ্রামের মো. চুন্নু (৩২), রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ধলনাকান্দি গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৪) ও একই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬১)। বাকি দুই জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

এদের মধ্যে চার জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাকি দুই জনের মৃত্যু হয়েছে টাইঙ্গালের কুমুদিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।

আহতরা হলেন, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরবাগ গ্রামের রেশমী বেগম (২০), একই উপজেলার কদরপাড়া গ্রামের চন্দ্রনা, আশবাড়ী গ্রামের মো. পারভেজ (১২), হরিরাম শাহাপুর গ্রামের মো. রাশেদুল ইসলাম (২৭) ও রাজশাহীর বোয়ালী ‍উপজেলার মতিয়া বিল গ্রামের মো. রিদয় মিয়া (২২)। এদের মধ্যে রেশমী বেগম ও চন্দ্রনার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মির্জাপুরের কুর্নী নামক এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান গোরাই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন।

তিনি জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসে ত্রুটি দেখা দেয়। পরে মেরামতের জন্য বাসটি রাস্তার পাশে দাঁড় করানো হয়। সবজিবাহী একটি ট্রাক পেছন থেকে দ্রুত গতিতে আঘাত হানে বাসটিকে।

চাকা মেরামতের সময় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে তা দেখছিল। আর এই দুর্ঘটনায় হতাহতের মধ্যে বেশিরভাগই তারাই। সজোরে ধাক্কার কারণে ট্রাকটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। সে তুলনায় বাসের কাঠামোর ক্ষতি কম হয়েছে। পেছনের অংশে এক পাশ ভেঙে গেছে কিছুটা।পরে হাইওয়ে পুলিশ র‌্যাকার নিয়ে এসে ট্রাকটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, নিহতদের মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, বাস এবং ট্রাকটিকে জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক এবং বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকের চালকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

নাটোরে ট্রাকের ধাক্কায় আলাল ফকির নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের হয়বতপুর বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আলাল ফকিরের বাড়ি হয়বতপুর এলাকায়।সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় আলাল রাস্তায় পড়ে যান। ট্রাকটি তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।

ওসি জাহাঙ্গীর জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল পৌনে আটটার দিকে আলালের মৃত্যু হয়।

ওসি আরও জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ট্রাক এবং চালককে পুলিশ এখনও আটক করতে পারেনি। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা করা হয়নি।

ঢাকায় ফুপুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল দশ বছর বয়সী নূর সাইবা আকতার। তবে বাড়ি ফেরা হল না তার। শুক্রবার সকাল নয়টায় রাজধানীর মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে সে।

এ ঘটনায় অটোচালকসহ আহত হয়েছেন আরও তিন জন।

আহতরা হলেন সাইবা আকতারের ভাই, ভাবি ও অটোরিকশার চালক। অটোরিকশায় সাইবার ভাইয়ের শাশুড়ি ছিলেন। তিনি সুস্থ আছেন।সাইবাদের গ্রামের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জ।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা জানান, সাইবা তার ভাই, ভাবি ও ভাইয়ের শাশুড়িসহ ঢাকায় ফুপুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল। ফেরার পথে তারা চার জন ছিলেন অটোরিকশায়।

তিনি জানান, শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলা আল মক্কা পরিবহনের একটি বাস একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।

ওসি জানান, চালককে আটক করে বাসটি জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। সাইবার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়া মানিকদি এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন কলেজছাত্র ইফতিখারুল ইসলাম। গুরুতর আহত হয়েছেন তার বন্ধু অনন্ত বড়ুয়া।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন।

ইফতিখারুলের বাসা বাসাবো আর অনন্তের বাসা কদমতলী এলাকায়। খেলা দেখাতে যাওয়ার কথা বলে সকালে ইফতেখারুল বাসা থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন।

দুই বন্ধু সম্প্রতি মোটর সাইকেল চালানো শিখেছিলেন।যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহসিন নিউজবাংলাকে জানান, ইফতিখারুল রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অনন্ত নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তারা খেলা দেখতে যাওয়ার কথা বলে বাইকে করে বের হয়েছিল। ট্রাকের ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক ইফতেখারুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

অনন্তের অবস্থাও ভালো না। তিনি কথা বলতে পারছে না বলে জানিয়েছেন এসআই মহসিন।

মাগুরায় শুক্রবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের দুই গৃহবধূসহ এক পল্লী চিকিৎসক নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন সাথী মজুমদার (৩০) ও স্বর্ণলতা মজুমদার (২৭), তারা সম্পর্কে জা। অন্য দুর্ঘটনায় নিহত আহাদ আলি মোল্যা (৬০) পল্লী চিকিৎসক।

পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে সাথী ও স্বর্ণলতা ইজিবাইকে করে মাগুরার রামনগর এলাকায় আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। মাগুরার ঠাকুরবাড়ি এলাকায় তারা ইজিবাইক থেকে নেমে মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী সবজি বোঝায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের চাপা দেয়। গুরুত্ব আহত সাথী ও স্বর্ণলতাকে হাতপাতালে নেয়া হলে চিকিৎস তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া সকালে জেলার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুরে দ্রুতগামী নছিমনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন আহাদ আলি। স্থানীয়রা তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।

তার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানা এলাকায়।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে জানান, একই পরিবারের দুইজন গৃহবধূ নিহত হওয়ার ঘটনায় ট্রাকটি হাইওয়ে পুলিশ আটক করেছে। তবে চালক ও হেলপার পলাতক। এ বিষয়ে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর