বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩৫ বছর পর দুই পায়ে হাঁটছেন স্বপন

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:৪৩

পরিপূর্ণ ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে আস্তে আস্তে ডান পাটি পুরোপুরি বেঁকে যায়। ফলে ওই পা দিয়ে হাঁটাচলা করা আর সম্ভব হয় না তার। পঙ্গু হয়ে যান তিনি। এভাবে কেটে যায় ৩৫টি বছর।

৩৫ বছর আগের কথা। স্বপন গাজীর বয়স তখন মাত্র ১০ বছর। এক শীতের ভোরে বাড়ির সামনের উঠোনে বড় বোনের সঙ্গে বসে আগুন পোহাচ্ছিলেন। বড় বোন কিছুক্ষণের জন্য বাড়ির ভেতর গিয়েছিলেন। এ সময় অসাবধানতায় হঠাৎ তার লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। আগুন নেভাতে নেভাতে ডান পায়ের হাঁটুর অংশের অনেকখানি জায়গা পুড়ে যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার দেখানো হলেও তার দরিদ্র রিকশাচালক বাবার পক্ষে ভালো কোনো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। পরিপূর্ণ ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে আস্তে আস্তে ডান পাটি পুরোপুরি বেঁকে যায়। ফলে ওই পা দিয়ে হাঁটাচলা করা আর সম্ভব হয় না তার। পঙ্গু হয়ে যান তিনি। এভাবে কেটে যায় ৩৫টি বছর।

সম্প্রতি তার এই পঙ্গুত্বের অবসান ঘটেছে। দুই পায়ে হাঁটছেন এখন স্বপন। আর এটা সম্ভব করেছেন ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের একদল চিকিৎসক।

চাঁদপুর সদর উপজেলার খুলিশাডুলি এলাকার মৃত ফজলুর রহমান গাজীর ছেলে স্বপন গাজীর এখন বয়স ৪৫ বছর।

স্বপন গাজী

 

হাসপাতালে কথা হয় স্বপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডান পা বাঁকি যাওনে আমি ক্রাচ দিয়া হাঁটতাম। পড়ালেখা কইরতাম ফারিনো। সংসারের জন্য এক পা লই রিকশা চালাইসি।’

‘আমার ফায়ের অবস্থা আরও খারাফ হই গেসিল, হেই সময় আমি সরকারি জেনারেল হাসপাতালোত যাই। হিয়ানো ডাক্তারদের কাছে আমার অসুবিদার কথা কই।’

‘হের বাদে ডাক্তাররা কয় আমারে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাইব। গত অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হই। হের বাদে আমার অপারেশন হয়।’

স্বপন বলেন, ‘আমি যে কী খুশি হইসি তা কইতে ফারুম না। এই হাসপাতালোর ব্যাক মানুষের কাছে আমি ঋণী হই রইলাম।’

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক আনিসুর রহমান সূফী বলেন, ‘স্বপন গাজী হাসপাতালে এসে যোগাযোগ করলে তাকে আমরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিই। এ অবস্থায় হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও সহকারী রেজিস্ট্রার ফরিদ আহমেদ চৌধুরীসহ একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘স্বপন গাজী যে রোগে ভুগছিলেন তা মেডিক্যালের পরিভাষায় পোস্ট বার্ন কন্ট্রাকচার বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আগুনে পুড়ে শরীরের কোনো অংশ কুঁচকে যাওয়া রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার সেই কুঁচকানো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। মেডিকেল পরিভাষায় একে ‘মারজলিন আলসার’ বলা হয় যা ক্যানসারের দিকে যাচ্ছিল।’

‘কয়েকটি ধাপে আমরা স্বপন গাজীর অপারেশন করি। প্রথম ধাপে তার পায়ের সমস্ত পোড়া অংশ অপসারণ করি। বিষয়টি যথেষ্ট জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ  ছিল। পরে বাঁকা পা সোজা করি। তার শরীরে ক্যানসারের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা তা জানতে আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাই।’

‘খুশির সংবাদ হলো ঢাকা থেকে আসা রিপোর্টে দেখা যায় তার শরীরে ক্যানসারের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর রোগীকে নিয়মিত ফলোআপ করি এবং দ্বিতীয় দফা অপারেশনের উপযুক্ত হলে তার স্কিন গ্রাফট করি।’

‘এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। তাকে কিছু ব্যায়াম দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত চর্চা করলে তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন ।’

অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্বপন গাজী এখন নিজের দু পা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা শুরু করছেন। চাঁদপুরের বাইরে তার পায়ের এই জটিল রোগের চিকিৎসা করতে হলে ব্যয় হতো প্রায় ৩ লাখ টাকা।’

‘কিন্তু এই হাসপাতালে আমরা তাকে এক টাকাও খরচ করতে দিইনি। স্বপন গাজীর ৩৫ বছরের এই অভিশপ্ত জীবনের অবসান হওয়ায় তার মতো আমরাও অনেক আনন্দিত।’

এ বিভাগের আরো খবর