কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার বিরোধিতা করায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ‘লিপ সার্ভিস’ ছাড়া কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন ভিডিও কনফারেন্সে। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে কথা বলেন।
তিন বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক হাজার ৬৪২ জনকে প্রথম ধাপে ভাসানচর পাঠাচ্ছে সরকার। নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌ বাহিনীর জেটি থেকে শুরু হয় এই যাত্রা।
কক্সবাজার ক্যাম্পে গাদাগাদি করে থাকতে হলেও ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানসম্পন্ন ও দৃষ্টিনন্দন আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুরুতে রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে রাজি না হলেও সেপ্টেম্বরে একটি দলকে ভাসানচর পরিদর্শন করিয়ে আনার পর সেখানে যেতে রাজি হয় রোহিঙ্গারা। যদিও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি জানিয়েছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা যাবে না।
বক্সবাজার ক্যাম্প ছেড়ে ভাসানচড়ে পাড়ি জমানোর আগে স্বজনকে জড়িয়ে রোহিঙ্গা নারীর কান্না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, পর্যটন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই সরকার তাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক কারণে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে স্থানীয় অধিবাসী মাত্র পাঁচ লাখ। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ সমালোচনা করছে, এটা দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও লিপ সার্ভিস ছাড়া কোনো ধরনের সহযোগিতা কি আমরা পেয়েছি?’
রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো গায়ে পড়ে ঝগড়া করে না, তবে কেউ আক্রমণ করলে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত।’
দেশে নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, সারাদেশে আজ যেই ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হয়েছে, তাতে প্রতিপক্ষ কোনো ধরনের ধন্যবাদ তো জানায়ইনি, উল্টো তারা শুধু সমালোচনাই করেই যাচ্ছে, যা জাতি কখনো আশা করেনি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ মানুষের মনের মনিকোঠায় উন্নয়ন, সততা দিয়েই দেশের জনগণের মন জয় করে নিয়েছেন, এতেই বিএনপির সহ্য হয় না।’
২০২১ সালের প্রথম মাসেই করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছেন কাদের। এর আগ আসার আগ পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরার পরামর্শ দেন তিনি।
দলের নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা রাখার নির্দেশও দেন কাদের। বলেন, ‘দল করলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে।’
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জিতে আসলেও পরে তাদেরকে আর সুযোগ দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির উদ্যোগে এই আয়োজনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।