বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচ্ছেদ বেদনায় জান্নাতুলের ‘আত্মহনন’

  •    
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:৫৯

‘হাসিনের সঙ্গে যে ছেলেটির সম্পর্ক ছিল গত রমজানে সে বিয়ে করে। এতে ভেঙে পড়ে হাসিন। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়েছি। আমরা মনে করেছিলাম হাসিন সামলে উঠছে। সে স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সে এমন করবে আমরা বুঝতে পারিনি।’

‘বিচ্ছেদের কষ্টটা সহ্য করতে পারেনি মেয়েটা। আমাদের সঙ্গে কথাটা বলতে পারেনি। আমি আমার মেয়েকে ভুলতে পারছি না। বড় লক্ষ্মী ছিল হাসিন। ‘আমার পায়ে সমস্যা। মারা যাওয়ার আগের দিনও আমাকে পায়ের এক্সরে করতে বলেছিল মেয়েটা। কিন্তু তার মনে যে এত অভিমান জমা ছিল তা কে জানত। জানেন, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী?’ কথা বলতে বলতেই চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে জান্নাতুল হাসিনের বাবা ইদ্রিস মেহেদীর। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা যারাই করছেন তাদেরকে ধরেই কেঁদে উঠছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ইদ্রিস মেহেদীর বাড়িতে ভিড় করেছেন স্বজনরা। হাসিখুশি মেয়েটার এভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না কেউই। দিনের বেলা কোন রকম কেটে গেলেও রাতটা যেন শেষই হয় না ইদ্রিস মেহেদীর। মেয়ে হাসিনের নীল শাড়ি পড়া ছবিটা বুকে জড়িয়ে থাকেন। বাসায় কেউ গেলে তাকে ছবিটা দেখিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়েটা রত্ন ছিল। আমি তাকে কখনো কোনো অভাব বুঝতে দেইনি। তারপরও কেন আমার সঙ্গে এমন হলো।’মেয়ে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা জাহানরা বেগম। গত তিন দিন ধরে বিছানায় শুয়ে কেঁদে কেটেই দিন কাটছে তার। বৃহস্পতিবার এশার নামাজ শেষে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাসিনের সঙ্গে যে ছেলেটির সম্পর্ক ছিল গত রমজানে সে বিয়ে করে। এতে ভেঙে পড়ে হাসিন। আমি তাকে যথেষ্ট সান্ত্বনা দিয়েছি। আমরা মনে করেছিলাম হাসিন সামলে উঠছে। সে স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সে এমন করবে আমরা বুঝতে পারিনি।’মঙ্গলবার ধর্মসাগর এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের কাছ থেকে হাসিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নয় তলা ভবন থেকে তিনি লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।তেইশ বছরের হাসিন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস টেকনলজিতে পড়তেন।বুধবার ইদ্রিস মেহেদি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘সোমবার কাউকে কিছু না জানিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় চলে আসেন হাসিন। পর দিন দুপুরে সে আমাদের এক হাজার টাকা দেয়। টাকা কোথায় পেলে জানতে চাইলে হাসিন বলেছিল সে ব্যাংকে ইন্টার্ন করছে। এটা তার প্রথম উপার্জন।’এর ঘণ্টাখানেক পর হাসিন শ্যাম্পু আনার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। পরে তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।তার মৃত্যুর এক দিন পর ওই ভবন সংলগ্ন একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আসে নিউজবাংলার কাছে। দেড় মিনিটের ওই ফুটেজে দেখা যায়, হাসিন একাই ওই ভবনে ঢুকছেন। এর ঠিক ১০ মিনিট পরে হাসিনকে ভবন থেকে নিচে পড়তে দেখা যায়। লোকজন ছুটে গিয়ে তার মাথা ও শরীরে পানি ঢালতে থাকে।ভবনের নিরাপত্তাকর্মী হাবিবুর রহমান জানান, ‘হাসিন ঢোকার সময় তিনি কোথায় যাবেন জানতে চেয়েছিলেন। এ সময় হাসিন সপ্তম তলায় যাওয়ার কথা জানান।’

ইদ্রিস মেহেদীর বড় মেয়ে জান্নাতুল হেসান স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। ঢাকায় পড়ালেখার কারণে মেজো মেয়ে বড় বোন হেসানের কাছেই থাকত। ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমি কলেজে পড়ে। একমাত্র ছেলে তানভীর মাহতাব প্রিন্স কলেজের ছাত্র।হাসিনের বাবা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি একটি ব্যাংকে ইন্টার্ন করছিল হাসিন। অফিস শেষে বাসায় ফিরতে প্রায়ই তার দেরি হতো। এ নিয়ে বড় বোনের সঙ্গে তার মনোমালিন্য ছিল। বোনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না যাওয়াটাও কষ্ট দিয়েছে হাসিনকে।

হাসিনের মৃত্যুর ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর