করোনাভাইরাস মহামারি ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকটে পড়েছে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে বাংলাদেশে নব নিযুক্ত সুইডিস রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভোন লিনডে ও স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দে আসিস বেনিটেজ সালাসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কম হলেও সরকার সংকট সমাধানে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য করোনা টিকা সংগ্রহের সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশে ব্যবসা করার সব ধরনের সুবিধা রয়েছে জানিয়ে সুইডেন ও স্পেনকে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা, ‘আমরা সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করছি। ব্যবসায়িক সব সুযোগ সুবিধাই সেখানে থাকবে।’
সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ১৯৭১ সাল থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সুইডেন।
জনস্বার্থে নেয়া সরকারের নানা প্রকল্প, বিশেষ করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও গত এক যুগে নারীর ক্ষমতায়নে নেয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তুলে ধরেন জলবায়ু ক্ষতিজনিত সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপও।
কোভিডের সময়ও দেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিল না করায় সুইডেন সরকারকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় সুইডেনের তৈরি বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দ্রা বার্গ বন লিনডে।
লিঙ্গ সহিংসতা ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান সুইডেনের রাষ্ট্রদূত। প্রশংসা করেন নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের।
এদিকে, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দে আসিস বেনিটেজ সালাসের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
গণভবনে স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো দে আসিস বেনিটেজ সালাসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎ
শেখ হাসিনা জানান, তৈরি পোশাক ছাড়াও পাট, চামড়া ও ঔষধশিল্পেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। স্পেন খাতগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্পেন শুল্ক সুবিধাসহ বৈদেশিক বিনিয়োগ বান্ধব বিভিন্ন প্যাকেজ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া বিশাল আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাজারের সুবিধাও নিতে পারে।
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পেন চাইলে দেশের নৌপথেও বিনিয়োগ করতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে স্পেনের সুন্দর সম্পর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এ সময় কোভিড পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্পেনের রাষ্ট্রদূত। পাশাপাশি, জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করেন তিনি।
এ সময় দেশের অবকাঠামো ও রেল খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চতুর্থ বড় বাজার স্পেন।
দুই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেত কায়কাউস এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নাকিব আহমেদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।