‘ভাস্কর্য নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, আগে নিজেদের চরিত্র ঠিক করেন। বিভিন্ন মাদ্রাসায় যেভাবে শিশু বলাৎকার হচ্ছে, আগে সেটি বন্ধ করেন।’
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে এই পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাস্কর্যবিরোধীরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। তাদের কথায় কিছু যায় আসে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতা। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন ওবায়দুল কাদের।
ভাস্কর্যবিরোধীদের হানিফ বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, আগে নিজেদের চরিত্র ঠিক করেন। বিভিন্ন মাদ্রাসায় যেভাবে শিশু বলাৎকার হচ্ছে, আগে সেটি বন্ধ করেন।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল। শুরুতে চুপ থাকলেও আওয়ামী লীগ এখন এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে। সক্রিয় হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক অন্য সংগঠনগুলোও।
ভাস্কর্যবিরোধীদের শাস্তির দাবিতে সক্রিয় সংগঠন ও ব্যক্তিরা মাদ্রাসায় বলাৎকারের প্রসঙ্গটি সামনে এনে প্রশ্ন তুলছেন, এগুলো ইসলাম সম্মত কি না। এমনকি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বলেছেন, ‘যৌন নির্যাতনে মৌলভী সাহেবদের সম্মান কমছে।’
নারায়ণঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মসূচিতে হেফাজত নেতা জুনাইদ বাবুনগরীকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুয়েল হোসেন বলেন, ‘কিছু কিছু স্থানে ইসলামের নাম বিক্রি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসায় আমাদের সন্তানদের বলাৎকার করা হয়। কই তখন তো আপনারা প্রতিবাদ করতে আসেন না।’
অবশ্য পাল্টা এই আক্রমণ নিয়ে মুখ খুলছেন না ভাস্কর্যবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি। অথচ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোসহ প্রায় সবদেশে ভাস্কর্য রয়েছে।
‘তারা (ভাস্কর্য বিরোধীরা) শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে সরকার কোন বাধা দিবে না, তবে আন্দোলনের নামে অশান্তি সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের মদদে মৌলবাদী গোষ্ঠী ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে। তারা বিভিন্ন সময় ছাত্র আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন ও ধর্মীয় আন্দোলনের কাঁধে ভর করে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
দলের শৃঙ্খলা নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, বিগত দিনে নির্বাচনে যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে এবং দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে; তারা কখনোই দলের নেতৃত্বে আসতে পারবে না।
শিগগিরই লক্ষ্মীপুর জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব কমিটি করে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার কথাও জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানও এ সময় বক্তব্য দেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে সভার সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন।