বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভাস্কর্যবিরোধীরা দেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চায়’

  •    
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:১২

‘অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ করব। কিন্তু দেশকে পাকিস্তান বা তালেবানে পরিণত করতে দেব না।’

‘আমি আশ্চর্য হই, দুঃখ লাগে। যার নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দেয়া হয়।’

কথাগুলো বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোতালেব মৃধার। তিনি বলেন, ‘এরা তারাই যারা একাত্তরেও স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। ধর্মের দোহাই দিয়ে এরা দেশটাকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্যে পরিণত চায়।’

বরগুনা মুক্ত করতে যে বীর সেনানীরা লড়াই করেছিলেন, তাদের অন্যতম মোতালেব মৃধা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে এনেছিলেন লাল-সবুজ পতাকা।

৩ ডিসেম্বর বরগুনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় মোতালেব মৃধার। সেখানেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

মোতালেব মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদেরকে এও সহ্য করতে হবে ভাবিনি। যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই এই মহল কোনো না কোনো ইস্যুতে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ করব। কিন্তু দেশকে পাকিস্তান বা তালেবানে পরিণত করতে দেব না।’

মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের অধীন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর বরগুনার সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, কিছু রাইফেল ও বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।

তবে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আটকানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। পাকবাহিনী এক অর্থে বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখল করে নেয়। এরপর জেলার বিভিন্ন থানা ও তৎকালীন মহাকুমা সদরে পৈশাচিক নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায় তারা।

২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে বলে জানান মোতালেব মৃধা।

এদিকে বিনা বাধায় বরগুনা ছেড়ে দিলেও কয়েক মাস পরই শক্তি সঞ্চয় ও মনোবল বাড়িয়ে বরগুনায় ফিরে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। এক পর্যায়ে বরগুনা ট্রেজারি ও গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয় হানাদার বাহিনী। কিছুদিন পর পুলিশ, রাজাকার ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে বরগুনা ছেড়ে যায় তারা।

এরপর ৩ ডিসেম্বর বরগুনার নিয়ন্ত্রণ নিতে জেলখানা ও তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আক্রমণ চালান মুক্তিযোদ্ধারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে সেদিন নৌকা নিয়ে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালীতে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা। সংকেত পেয়ে ভোররাতে তারা কিনারায় উঠে আসেন। দলের সদস্য ছিল মাত্র ২১।

ফজরের আজানকে যুদ্ধ শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছয় স্থান থেকে একযোগে গুলি শুরু করেন তারা। এরপর জেলখানার দিকে এগোতে থাকেন। চার সহযোগীসহ আগেই কারা এলাকায় অবস্থান নেন সত্তার খান।

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রতিরোধ ছাড়াই জেলখানা এলাকায় থাকা পুলিশ ও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) আনোয়ার হোসেনকে আত্মসমর্পণ করান। স্বাধীন হয় বরগুনা।

মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব মৃধা জানান, বরগুনা জেলা সদরের আগে ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আরেকটি এলাকা হানাদার মুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সেটি বামনা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

এ ছাড়া বেতাগি উপজেলা ১ ডিসেম্বর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা ১৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়।

বরগুনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক সংগঠন সাগরপাড়ি খেলাঘর আসরের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গণকবরে শহিদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বরগুনার শহিদ সেনানীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর