বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমসি কলেজে ধর্ষণ: ৮ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

  •    
  • ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:২০

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার দুই মাসের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হলো।

সিলেটে মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ মামলায় আট ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার দুই মাসের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হলো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওই আট জনের মধ্যে ছয় জন সরাসরি ধর্ষণে জড়িত। বাকি দুজন তাদের সহযোগী।

ধর্ষণে জড়িত উল্লেখ করা ছয় জন হলেন সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মো. আইনুদ্দিন ও মিসবাউর রহমান রাজন। সহযোগী দুজন হলেন মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল ইসলাম।

এ ঘটনায় দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)।

এর আগে বুধবার সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের নিউজবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে অভিযোপত্র জমা দেয়া হবে। দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

গেল ৩০ নভেম্বর ধর্ষণের ঘটনার ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছায়। ডিএনএ প্রতিবেদনে ধর্ষণের সঙ্গে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্করের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

ধর্ষণের ঘটনায় এই চার জনসহ আট জন জেলহাজতে রয়েছেন। গ্রেফতার আট জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

১ ও ৩ অক্টোবর গ্রেফতার আট জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে অভিযোগপত্র আটকে থাকার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৫)। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাদের মারধর করে টাকাপয়সাও ছিনিয়ে নেয় ধর্ষণকারীরা।

ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী ছয় জনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। পরে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইনও সংশোধন করে সরকার।

মামলায় বলা হয়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ সুরমার এক যুবক। ফেরার পথে সন্ধ্যার দিকে টিলাগড়ে এমসি কলেজের ফটকের সামনে থামেন তারা। এ সময় কয়েকজন তরুণ এসে ওই যুবকের স্ত্রীকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ ওই যুবক ও তার স্ত্রীকে কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান।

এরপর যুবককে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে প্রাইভেটকারের মধ্যেই ধর্ষণ করেন পাঁচ থেকে ছয় জন। পরে এই দম্পতিকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেন ধর্ষণকারীরা। আটকে রাখেন প্রাইভেটকারও।

ছাত্রাবাস থেকে ছাড়া পেয়ে টিলাগড় পয়েন্টে এসে পুলিশকে ফোন করেন নির্যাতিতার স্বামী। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতির প্রাইভেটকার উদ্ধার করে এবং নির্যাতিতাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা।

ওই রাতেই ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আর সোয়াশ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। দায়ীদের বিচার ও নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ।

মামলা পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ঘটনার তিন দিনের মধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোনো পদে না থাকলেও গ্রেফতার হওয়া সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা যায়।

গ্রেফতারের পর তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সবাই ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজ ছাত্রবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। সেই মামলার অভিযোগপত্রও এখনও দেয়া হয়নি।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে এরই মধ্যে হাই কোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামিম গঠিত বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

ধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।

তা ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।

এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর