কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া ৩৪টি শরণার্থী শিবিরের ১১ লাখ রোহিঙ্গা থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা জানান, ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সবকিছু প্রস্তত। কবে থেকে স্থানান্তর শুরু হবে সে বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
রোহিঙ্গাদের পরিবহণের জন্য চট্টগ্রামে নৌ-বাহিনীর ১৪টি জাহাজ এনে রাখা হয়েছে এবং মজুত করা হয়েছে ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ বাসস্থানেই তারা রান্না করতে পারবেন।
এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম দেখে ২২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, উন্নতমানের একটি আবাসিক এলাকায় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার সবই রয়েছে ভাসানচরে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-২০ এর হেড মাঝি মোহাম্মদ হোছন, ক্যাম্প-১৭ এর হেড মাঝি মোহাম্মদ নূর, ক্যাম্প-৫ এর হেডমাঝি জাফর আলম জানান, তাদের ক্যাম্প থেকে ৮টি, ৯টি ও ৫টি রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। তারা সবাই ট্রানজিট পয়েন্টে আছেন।
উখিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক তহিদুল আলম বলেন, ভাসানচরে স্থানান্তরের পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পাঠিয়ে নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা হোক।
সংশিষ্টরা জানান, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য এই অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছে। নোয়াখালীর এই দ্বীপটি বাস উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে।
রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।
সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি মূলত ক্লাস্টার হাউস, শেল্টার স্টেশন বা গুচ্ছগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মোট ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৪০টি। প্রতিটি ঘরে ১৬টি করে কক্ষ রয়েছে। এগুলো মাটি থেকে চার ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আনুমানিক ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড় সহনীয় একটি শেল্টার স্টেশন রয়েছে।
দুটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর চেয়ারপারসন জেসমিন প্রেমা বলেন, ‘আমরা যা ধারণা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর ও নিরাপদ জায়গা মনে হচ্ছে ভাসানচর।’
বেসরকারি সংস্থা মুক্তিঘরের মনিটরিং ও ইভালুয়েশন কর্মকর্তা ফয়সাল বারী জানান, বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই কক্সবাজারে ভূমিধ্বস হয়। সেখানে রোহিঙ্গারা বন উজাড় করছে। তাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত খুবই যুক্তিযুক্ত হয়েছে।