ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয় ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। আজ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা হবে।
সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা (বদর) নিউজবাংলাকে বলেন এই জেলা মুক্ত হওয়ার ঘটনা।
তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় ১০টি থানা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসই তেঁতুলিয়া থানা ছিল শত্রুমুক্ত। এই মুক্তাঞ্চল থেকেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হতো।
৬ নম্বর সেক্টরের আওতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় থানা দখলে নেন। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে থাকে।
তারা পঞ্চগড় ছেড়ে ময়দানদিঘী, তারপর বোদা এবং সব শেষে ঠাকুরগাঁও থানার ভুল্লিতে ঘাঁটি গাড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা যাতে না আসতে পারে, তাই তারা বোমা মেরে ভুল্লি ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ১ ডিসেম্বর রাতে ব্রিজের ওপারে পৌঁছে যায়। সেখানে চলে রাতভর সম্মুখ যুদ্ধ। ২ ডিসেম্বর সারা দিন যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। তারপর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে। অবস্থান নেয় ঠাকুরগাঁও শহরে।
মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ভুল্লি পার হয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে যাওয়ার সময় দেখেন রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে।
২ ডিসেম্বর রাতভর মাইন অপসারণ করে প্রচণ্ড আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি বাহিনী ঠাকুরগাঁও শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা (বদর) আরও জানান, ‘আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভোরে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ফায়ার করতে করতে শহরে ঢুকে পড়ি। তখন জনশূন্য হয়েছিল ঠাকুরগাঁও। পরে বিজয়ের উল্লাসে শত শত মানুষ জয়বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে জনমুখরিত করে।
তারা আমাদের নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। আমাদের সেই দিন তারা যেভাবে মূল্যায়ন ও সম্মান করেছিল, সেটি ভোলার মতো নয় এবং আজও মনে পড়ে।’
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জেলা কমিটির সভাপতি সেতারা বেগম বলেন, ১০ ধরে উদীচী দিবসটি পালন করে আসছে। এর আগে স্বাধীনতার ৩৮ বছরেও কেউ পাক হানাদার মুক্ত দিবসটি পালন করেননি।
তিনি বলেন, ‘এবারও দিবসটির উপলক্ষে আমরা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা চেতনার প্রয়াশকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ভবিষ্যতেও আমরা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালন করব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে আমরা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালনে অতীতেও সাহায্য-সহায়তা করেছি, এখনও করছি এবং ভবিষ্যতেও করব।’
জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, দিনটি ঠাকুরগাঁওবাসীর জন্য অত্যন্ত গর্বের, আনন্দের ও মর্যাদার। অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করে অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে শত্রুমুক্ত করেন। বার্তাটি নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতি বছর দিবসটি পালন করে।