জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চার খুনিকে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য দেয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
তারা হলো- বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত শরিফুল হক ডালিম ও রাশেদ চৌধুরী এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস রিট আবেদনটি করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর ওই চার খুনির মধ্যে নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। কিছু দিন আগে সেখানে তার গ্রেফতার হওয়ার গুজব ছড়িয়েছিল। আর ডালিম কোথায় আছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
রিট আবেদনটি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব এবং চার খুনিকে বিবাদী করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জনকে বীর উত্তম, ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম ও ৪২৬ জনকে বীর প্রতীক উপাধি দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ হয়।
রিটকারী আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার খুনির খেতাব বাতিলে এক ও দুই নম্বর বিবাদীর নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের খেতাব ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনের যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্তদের সম্মানজনক পদক থাকার আইনগত কোনো ভিত্তি নাই। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাজাপ্রাপ্তদের সম্মানজনক খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে। আবেদনে এসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি।
‘শুধু অভিযোগ আসাতেই মিয়ানমারের অং সাং সু চির পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও সম্মানজনক খেতাব প্রত্যাহারের জন্য আবেদনে উল্লেখ করেছি।’
এই আইনজীবী জানান, তাদের খেতাব বাতিলে গত আগস্ট মাসে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নোটিশের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই এই রিট আবেদন করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে তার ধানমন্ডির বাসায় সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় প্রাণে বেঁচে যান দেশের বাইরে থাকায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। তাদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলো- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)।
বাকি সাত খুনির এক জন আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান। আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদ হঠাৎ গত ৭ এপ্রিল ঢাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তার ফাঁসি কার্যকর হয় গত ১১ এপ্রিল।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খানের পাশাপাশি পলতাক রয়েছেন খন্দকার আবদুর রশিদও।
ডালিমের মতো রশিদের অবস্থানের বিষয়েও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।