মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের ভম্বল শীল প্রায় ২০ বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি টানা সাত দিন ঘুমান। একবেলা ১০ জনের খাবার পেটে চালান করে দিতে পারেন। এ কথা কি সত্যি?
ভম্বল ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তা অসত্য বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ভম্বল শীল সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। চার ভাইয়ের মধ্যে দুই জন থাকেন ভারতে। বাপ-দাদার বসতভিটায় ভম্বলের বড় ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন। দাদা-বৌদিই দেখা শোনা করেন ভম্বলের।
দুটি টিনের ঘর। একটি ঘরে থাকেন ভম্বলের দাদা-বৌদি। অন্য ঘরের মাঝখানে টিনের বেড়া। এক পাশে থাকে তার ভাতিজা। অন্য পাশে থাকেন ভম্বল। তার ঘুমানোর জন্য ভাঙাচোরা একটি চৌকি আছে। ঘরের ভেতরে মাটির মেঝেতেই প্রস্রাব-পায়খানা করেন। বৌদি তা পরিষ্কার করেন।
ভম্বল শীলের বৌদি কল্পনা শীল নিউজবাংলাকে জানান, রাতে ভম্বলের ঘুম খুব কম হয়। অনেক সময়ই জেগে থাকেন। একা একা কথা বলেন। কখনো গান করেন। সকালে নাম ধরে ডাক দিলে সাড়া দেন।
তিনি বলেন, তারা গরিব মানুষ। নিজেরাই তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পান না। তবে তার দেবরকে কিছু না কিছু খেতে দেন। কোনো দিনই তাকে উপোস করতে হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো উৎসবের দিন কিংবা নেমন্তন্ন পেলে তার দেবর অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই খান। মাঝেমধ্যে দুই-তিন জনের খাবার খেতে পারেন ভম্বল।
বড় ভাই শংকর কুমার শীল জানান, তিনি রাস্তার পাশে বসে মানুষের চুল দাঁড়ি কেটে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টাকা আয় করেন। তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। স্কুলপড়ুয়া ছেলেসহ তিন জনের অভাবের সংসার। তার ছোট ভাই ভম্বলের বয়স এখন ৩৮ বছর। প্রায় ২০ বছর ধরেই তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েক বার চিকিৎসা করানো হয়েছে ভম্বলকে। কিন্তু টাকার অভাবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
ভম্বলের ভাতিজা সৈকত শীল বলে, প্রায় আট বছর আগে তার কাকা ভম্বল বিয়ে করেন। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে থাকার কথা ছিল। কয়েক দিন শ্বশুর বাড়িতে ছিলেনও। কিন্তু অসুস্থ হওয়ায় শ্বশুন বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তার কয়েক বছর পর ভম্বলের স্ত্রী এসেছিলেন। কিন্তু ভম্বলের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বাবার বাড়ি চলে যান। এরপর আর যোগাযোগ করেননি।
ভম্বল শীল নিউজবাংলাকে অগোছালো কথাবার্তা বলেন। তার সার কথা হলো, শরীরে শক্তি থাকলে অনেক দূরে হাঁটতে যান। বাড়ি ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে থাকেন। অনেক সময় টানা তিন-চার দিন ঘর থেকে বের হন না। প্রায় রাতেই তার ঘুম হয় না। এ কারণে দিনে ঘুমানোর চেষ্টা করেন। তবে টানা সাত দিন ঘুমাননি কখনও।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আরশাদ উল্লাহ জানান, মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় এক জন মানুষ টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। এর পর ঘুম ভেঙে যাবে। পরে অবশ্য আবার ঘুমাতে পারবে।
সিভিল সার্জন মো. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি (ভম্বল) মানসিক রোগী। চাইলে আমাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এখানে আমরা তাকে চিকিৎসা দিতে পারব। আর যদি এখানে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটে পাঠাতে পারব। জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অবশ্যই সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।’
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, ভম্বল শীলের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।