স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারে দাঁড়িয়েও এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা। বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা খুঁজতে গেলে এখনও আঁকতে হয় প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৭২ হাজার সাত জন। ১ ডিসেম্বর নিউজবাংলার হাতে আসা এই তথ্যটিও চূড়ান্ত কিছু নয়। কারণ প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনলাইন ডেটাবেজ তৈরি করছে মন্ত্রণালয়, যা এখনও চলমান।
মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) এই সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, বিজয়ের এ মাসেই প্রকাশ করা হবে প্রাথমিক তালিকা। আর মহান স্বাধীনতা দিবসে তথা আগামী ২৬ মার্চ প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত তালিকা।
২০১৪ সালে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে হাত দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু ছয় বছরেও শেষ হলো না কাজ।
মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রকৃত তালিকা তৈরি একটি দীর্ঘ সময়ের কাজ। তবে কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক লাখ ৩৬ হাজারের বেশি আবেদন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই করে, ২৫ হাজারে এসে ঠেকেছে। সেটিও যাচাই বাছাই করা হলে পাঁচ হাজারের বেশি আবেদন টিকবে না। আরও অধিক যাচাই বাছাইয়ের পর সেখান থেকে অনেকেই চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেতে পারেন।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক তালিকা সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ৪১ হাজার নাম আছে যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে তাালিকাভুক্ত হয়েছে।
‘৪১ হাজার নাম আছে, যারা অতীতে জামুকা আইন লংঘন করে নিয়মবহির্ভূতভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সবকিছু যাচাই বাছাই করে এ মাসের মধ্যেই আমরা তালিকা প্রকাশ করে ফেলব।’
দেড় লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুত আছে বলেও জানান আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
‘চূড়ান্ত ধাপ শেষ হবে ২৬ মার্চ। এরপর একেবারে ব্লক হয়ে যাবে। আর কোনো সুযোগ থাকবে না। এখন যে নামগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে সেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে।’
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পাঠানোর ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেই প্রক্রিয়া তৈরি করেছে আরেক বিভ্রান্তি। এর আগে এক লাখ ৯২ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ভাতা পাঠানো হতো। সফটওয়্যার সেবা চালু করতে গিয়ে সংখ্যাটি কমে হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার। মাঝে ফারাক ২১ হাজার।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মুক্তিবার্তা, ভারতীয়, জাতীয়সহ নানা তালিকায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে একই ব্যক্তির নাম কয়েক জায়গায় ছিল। আবার খেতাবপ্রাপ্ত বা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও অনেকের নাম একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত থাকায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী বললেন ভিন্ন কথা। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, এনআইডির (জাতীয় পরিচয়পত্র) তালিকায় যদি কারও নামের গরমিল থাকে, বয়সের গরমিল থাকে, কিংবা বাবা-মার নামের গরমিল থাকে, সঙ্গত কারণেই তাদের নাম বাদ গেছে।
‘এখন অনলাইনে সব ভাতা পেমেন্ট হবে। যার যার অ্যাকান্টে টাকা চলে যাবে। কাজেই যদি কোনো গরমিল থাকে, তাকে সেটা সংশোধন করে নিতে হবে।’
আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, এ কারণে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ হবে না। তবে এমন সংকট যাদের তৈরি হয়েছে তাদের দ্রুততার সঙ্গে বিষয়গুলো নিষ্পত্তির পরামর্শ দিলেন তিনি।
‘বিষয়গুলো যখন সমন্বয় করা হবে তখন থেকে ভাতা পাবে। কাজেই যত দ্রুত তারা তাদের কাগজপত্র সংশোধন করবে, তত দ্রুতই তারা ভাতা পাবে। তবে তাদের ভাতা স্থগিত থাকবে, বন্ধ হবে না।’
কাগজপত্র সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নাম, বয়স সংশোধনের জন্য তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আসার দরকার নেই। স্ব স্ব উপজেলায় গিয়ে তারা ঠিক করবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিষয়গুলো যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সর্বশেষ এক লাখ ৭১ হাজার ৯৮ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ছাড় করা হয়েছে।
এদিকে, ভাতা পেয়েছেন কিন্তু নাম সফটওয়্যারে আসেনি এমন এমন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চেয়ে সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।