করোনাকালে কমে গেছে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল। আর এ কারণে কমে গেছে সামুদ্রিক জাহাজকে পথ চেনানোর কাজ করা দেশের বাতিঘরগুলোর আয়।দেশে এখন কুতুবদিয়া, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে তিনটি বাতিঘর আছে। উত্তাল সাগরে অবস্থান জানতে কিংবা বিদেশ থেকে আসা নাবিকদের বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান জানাতে সাহায্য করে বাতিঘর।
বাতিঘরের আলোর সংকেত দেখে অবস্থান নিশ্চিত করে নাবিকেরা। আবার কোনো কারণে সাগরে পথ হারিয়ে ফেললে দিকনির্দশনের জন্য সহায়তা করে এ বাতিঘরগুলো। এ জন্য জাহাজ মালিকদের গুণতে হয় টাকা।
নৌবাণিজ্য দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজকে পথ দেখিয়ে দেশের তিনটি বাতিঘরের আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৬৪ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে আয় হয়েছিল ২২ কোটি ৭৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আয় হয়েছিল। গত তিন বছরে বাতিঘরগুলোর আয় হয়েছে ৬৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে জাহাজ চলাচল কমে গিয়েছিল। এ জন্য গত বছরের তুলনায় দেশের তিন বাতিঘরের আয় কমেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনার কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া কমে গিয়েছিল। বন্দরের এক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫ মাসে ১০ লাখ কনটেইনার পরিবহন হয়। ২০১৯ সালে একই সময় পরিবহন হয় সাড়ে ১১ লাখ কনটেইনার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় কনটেইনার পরিবহন কমেছে ১৩ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, স্বাভাবিকভাবে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচল কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জাহাজ চলাচল কমে গেছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারি চলাকালে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চীন থেকে কনটেইনারবাহী জাহাজ কমিয়ে ফেলেছে মেইন লাইন অপারেটররা।
নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমুদ্রগামী দেশি-বিদেশি জাহাজ এবং উপকূলীয় এলাকায় চলাচলকারী জাহাজ মালিকদের বাতিঘর সেবার জন্য টাকা পরিশোধ করতে হয়।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের লাইট হাউস অর্ডিনেন্স অনুযায়ী, প্রতি টন পণ্যের জন্য পাঁচ টাকা করে নেয়া হয়। জাহাজের অবস্থানের উপর নির্ভর করে নেয়া হয় এ টাকা।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ অন্যান্য চার্জের সঙ্গে ওই টাকা সংগ্রহ করে নৌবাণিজ্য দফতরকে বুঝিয়ে দেয়। এ ছাড়া ১০ টনের ওপরের ফিশিং ট্রলার ও অন্যান্য দেশি জাহাজের ক্ষেত্রে বার্ষিক টনপ্রতি দুই টাকা হারে বাতিঘর চার্জ নেয়া হয়।
কুতুবদিয়ায় ১৮৪৬ সালে দেশের প্রথম বাতিঘর চালু হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে কক্সবাজার বাতিঘরটি স্থাপন করা হয়। একই বছর সেন্টমার্টিন দ্বীপেও বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনে বাতিঘর দুইটি উপকূল থেকে ১৯ দশমিক ৮ ন্যটিক্যাল মাইল কাভার করে। আর কক্সবাজারের বাতিঘরটি ২৪ দশমিক ৫ ন্যটিক্যাল মাইল দূর থেকে দেখা যায়।
কুতুবদিয়া বাতিঘরের বাতিগুলো ১০ সেকেন্ডে তিন বার জ্বলে বা ফ্লাশ করে। সেন্টমার্টিন বাতিঘর ২০ সেকেন্ডে দুই বার জ্বলে। কক্সবাজারের বাতিঘর ১৫ সেকেন্ডে একবার জ্বলে ওঠে। এ সিগন্যাল ব্যবহার করে দূর থেকে আসা জাহাজগুলো বঙ্গোপসাগরে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে।