বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনন্ত বিজয় হত্যা: সাক্ষ্য শেষ হয়নি সাড়ে ৫ বছরেও

  •    
  • ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:০১

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান বলেন, মামলায় ২১ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ বাকি আছে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ।

মুক্তমনা ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণই শেষ হয়নি।

সবশেষ মঙ্গলবার এক জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তবে এর আগে নানা অজুহাতে দফায় দফায় পিছিয়ে যায় মামলার তারিখ। আদালত পরিবর্তন করেও গতি আসেনি মামলার কার্যক্রমে। এ অবস্থায় বিচার পাওয়া নিয়েই সন্দিহান অনন্তের পরিবার।

মঙ্গলবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন মদন মোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেম।

এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার ১৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন। আবুল কাশেম অনন্ত হত্যা মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী ছিলেন। অনন্ত বিজয় দাশের মৃত্যুর পর সিলেট এমএজি ওসামানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুরতহাল প্রস্তুত করে পুলিশ। এ সময় সাক্ষী হিসেবে ছিলেন কাশেম।

২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে উগ্রবাদীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ১৮ নভেম্বর আবুল কাশেমের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল। ওইদিন আসামিদের আদালতে হাজির না করায় পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ। এভাবে কখনও আসামি, কখনও সাক্ষী হাজির না হওয়া আবার কখনও অন্য কোনো কারণেও বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে মামলার কার্যক্রম। অথচ এই মামলা দ্রুত শেষ করার জন্যই সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, অনন্ত হত্যা মামলাটি সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। গত বছরের ৭ মে এই আদালতে মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর সাক্ষী ও আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার বারবার পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ। চলতি বছরের শুরুতে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। নতুন আদালতে এলেও করোনার কারণে এ বছরের বেশিরভাগ সময় আটকে থাকে মামলার কার্যক্রম। এরপর কার্যক্রম শুরু হলেও তাতে গতি আসেনি।

তবে এই ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান বলেন, মামলায় ২১ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ বাকি আছে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, এই মামলার দুই আসামি ফারবী ও আবুল খায়ের অন্য মামলারও আসামি। তারা কাশিমপুর কারাগারে আছেন। ফলে সবসময় তাদের নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এ কারণে মামলাটির তারিখ পিছিয়ে যায়।

সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে অনন্ত ছিলেন সবার ছোট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।

হত্যার দিনই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় একটি মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১৬ জনের মধ্যে ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। অভিযুক্ত করা হয় ছয় জনকে।

অভিযুক্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ, কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন, কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান।

তাদের মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি সমর বিজয় শী নিউজবাংলাকে বলেন, এই মামলাটি নিয়ে শুরু থেকেই সরকার পক্ষের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আদালত তারিখ নির্ধারণ করলেও রাষ্ট্রপক্ষ আসামি ও সাক্ষীদের হাজির করছে না। ফলে মামলার কার্যক্রমেও গতি পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার না দেখেই অনন্ত বিজয়ের বাবা ২০১৭ সালে মারা গেছেন। তার মাও শয্যাশায়ী। তিনিও বিচার দেখে যেতে পাবেন কি না কিংবা আদৌ ন্যায়বিচার হবে কি না এনিয়ে আমরা সন্দিহান।’

এ বিভাগের আরো খবর