বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারে বিদেশি দুটি এয়ারলাইন্সের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানান, মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে ওই দুই এয়ারলাইন্সের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যাদের দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে, তাদের সবাইকেই ভিজিট ভিসা বা কনফারেন্স ভিসায় নেয়া হয়েছে। এসব ভিসায় কেউ কোনো দেশে গেলে তার রিটার্ন টিকিট থাকার কথা। কিন্তু কেউ রিটার্ন টিকিট নেননি। এটা এয়ারলাইন্সের গাফিলতি। এতে তাদের কর্মকর্তারা জড়িত।
‘অধিকাংশ মানব পাচার হয়েছে দুটি এয়ারলাইন্সে। আমরা এয়ারলাইন্স দুটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এয়ারলাইন্সের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারেন বলে তারাও স্বীকার করেছেন। কারণ কেউ জড়িত না থাকলে তো এমনটা হওয়ার কথা না।’
তবে এয়ারলাইনস দুটির নাম বলেননি সিআইডি প্রধান। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কোন কোন এয়ারলাইন্স এবং তাদের কারা জড়িত তা থাকবে।
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের জড়িত পলাতক ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। তারা হলেন- মিন্টু মিয়া, তানজিমুল ওরফে তানজিদ, জাফর ইকবাল, নজরুল ইসলাম মোল্লা, শাহাদাত হোসেন ও স্বপন।
এ বিষয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়ে ছয় মানব পাচারকারীকে গ্রেফতারের সহায়তা চায়। ২৭ নভেম্বর ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। তাদের মতো আরও কেউ আছে কিনা আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’
তিনি জানান, ছয় জনের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুর। সাহাদতের বাড়ি ঢাকায় এবং বাকি চারজনের কিশোরগঞ্জ। তানজিমুল বর্তমানে ইতালি রয়েছেন। অন্য পাঁচজন কোনো দেশে বেশি সময় থাকছেন না। এজন্য ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করেছে।
মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৬ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যার পর মানব পাচারের ২৬ মামলার মধ্যে ২৫টিরই তদন্ত করছে সিআইডি। এখন পর্যন্ত ১৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হবিগঞ্জের এক মামলার অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩৮ বাংলাদেশিকে লিবিয়া পাচার করা হয়। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজীতে নেয়া হয়। মুক্তিপণের জন্য গত ২৬ মে নির্বাচের গুলি করে তাদের মধ্যে ২৬ জনকে হত্যা করা হয়।’
সিআইডি প্রধান জানান, আলোচিত এ ঘটনায় মানব পাচারের অভিযোগে সারাদেশে ২৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে তিনটির বাদী সিআইডি। বাকিগুলোর বাদি ভুক্তোভোগীদের পরিবারের সদস্যরা।
ওই ৩৮ বাংলাদেশি কি এয়ারলাইন্স দুটির মাধ্যমে দেশ ছাড়েন- সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সবগুলো বিষয়ই আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’