বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেছেন, ক্রমাগত উস্কানি আসতে থাকলে সরকার বসে থাকবে না।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এই ইস্যুতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।
সরকারের মুখপাত্র বলেন, ‘একটি মহল মূর্তির সঙ্গে ভাস্কর্যকে তুলনা করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। … এই সমস্ত কথা বলে তারা সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এসব বক্তব্য পরিহার করার আহ্বান জানাই। ক্রমাগত উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকলে সরকার বসে থাকবে না।’
ভাস্কর্য ইসলামবিরোধী বলে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাদের পক্ষ থেকে আসা যুক্তি খণ্ডন করে মন্ত্রী সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তানের মতো মুসলিম প্রধান দেশে মানুষের ভাস্কর্য থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল।
প্রথমে এই ইস্যুতে মাঠে নামে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। তারা হুমকি দেয় ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। যদিও এখন এই ইস্যুতে এখন চুপ আছেন নেতারা।
তবে এরপর বিরোধিতায় নামে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দিয়েছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি দেশে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করবেন।
অবশ্য এই বক্তব্য দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়া মামুনুল সংবাদ সম্মেলনে এসে সুর নরম করেছেন। বলেছেন, ভুল তথ্য প্রচার করে তাকে প্রশাসনের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ভাস্কর্যের বিরোধী হলেও এ নিয়ে কোনো ‘যুদ্ধে যাবেন না।’
শুরুতে নীরব থাকলেও গত শুক্রবার বাবুনগরী হুমকি দেয়ার পর থেকে মুখ খুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হেফাজত নেতার বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে ‘প্রকৃত ইসলাম’ চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ হেফাজতকে সরকারের শক্তি সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
রোববার এই ইস্যুতে সারাদেশে একযোগে কর্মসূচি পালন করে লাখ লাখ মানুষকে রাজপথে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
এই পরিস্থিতিতে ভাস্কর্যবিরোধীরা আর নতুন করে কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ এই ইস্যুতে এত সময় নিল কেন, দেরি করেছে কি না- একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল সরকারের মুখপাত্রের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দ্বিতীয় দিনই আমি এই ইস্যুতে কথা বলেছি, হয়ত আপনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না।’
এ সময় অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যমের নিবন্ধন নিয়েও কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে যারা যোগ্য তাদের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। যারা ভুল তথ্য দিয়েছে, অফিসের ঠিকানায় অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি, ডোমেইন বন্ধ থাকে তাদেরকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি। যারা ভুল তথ্য দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আগামীতে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে অনলাইন সংবাদপত্র খুলতে হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হলেই সরকার এই ব্যবস্থা চালু করবে।’