বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মভিত্তিক দল হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর প্রেতাত্মা ভর করেছে হেফাজতে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে আলোচনায় আসা চট্টগ্রামের এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ইসলামিসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র যেখানে নামীদামি ব্যক্তিদের ভাস্কর্য রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপন বিষয় তুলকালাম কাণ্ড সৃষ্টির নেপথ্যে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
রোববার নগরের গোল পাহাড় মোড়ে ছাত্রনেতা মহিম উদ্দিন মহিমের ১৬তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন উপমন্ত্রী এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।
এর আগে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দেন, ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ না হলে দেশে আরও একটি শাপলা চত্বর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এই বক্তব্য দেয়ার পর আওয়ামী লীগ চুপ থাকলেও সোচ্চার হন নওফেল। বলেন, ‘ঘাড় মটকে দেবে জনগণ’। পরে মামুনুলের চট্টগ্রাম সফর নওফেল অনুসারীরা ঠেকিয়ে দিয়েছেন রাজপথের বিক্ষোভে।
এই আলোচনায় নওফেল বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত ইসলামী এখন তাদের খোলস পাল্টানোর চেষ্টা করছে। জামায়াতিদের অনেকেই এখন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। হেফাজতের নেতারা এখন বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতি স্টাইলে।
‘একদিকে সরকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে এ কওমিদের সমর্থিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষপর্যায়ের এসব নেতা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা প্রকারান্তরে জামায়াতের প্রেতাত্মা হিসেবেই আবির্ভূত বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
‘অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা ও চর্চা এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠনসহ ইসলাম প্রচারে তাবলিগ জামাতকে সরকারিভাবে জমি প্রদান করেন।’
চট্টগ্রামে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে মহিম উদ্দিনের ভূমিকা আছে উল্লেখ করে প্রয়াত নেতার স্মৃতিচারণ করেন নওফেল। বলেন, ‘তিনি সবসময় সাহসের সাথে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচিত হলে নগরীর গোলপাহাড় মোড়কে ‘মহিম চত্ত্বর’ করা হবে বলেও জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিমের সভাপতিত্বে এবং যুবলীগ নেতা নুরুল আনোয়ারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, সাবেক যুবনেতা জাহাঙ্গীর আলম, নগরীর বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দীন প্রমুখ।