বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেছে বলে বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস করে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যে জরিপ প্রকাশ করেছে, তাতে দায়িত্ব আরও বেড়েছে গেছে বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
‘গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার এশিয়া ২০২০’ শীর্ষক টিআই প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে, দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপের প্রতি আস্থাশীল দেশের ৮৭ ভাগ মানুষ।
২০১৯ সালের মার্চ থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপের ভিত্তিতে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, জরিপে অংশ নেয়া মানুষদের ৪৭ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেছে। আর ৪০ শতাংশ মনে করে বেড়েছে।
রোববার এক ভিডিওবার্তায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে দুদকের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।’
তার দাবি, জনগণ দুর্নীতিপরায়নদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন করে বলেই, দুদকের প্রতি তাদের আস্থা ব্যক্ত করেছে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘জনগণের আস্থাকে টেকসই করতে হবে। দুদককে নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
তার মতে জনগণের আকাঙ্খাকে বাস্তবায়ন করতে হলে দুর্নীতি শনাক্তকরণ, অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশন নিখুঁতভাবে করার বিকল্প নেই।
‘কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতিপরায়নদের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে হবে যে, দুর্নীতি করলে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। কঠোর শাস্তি পেতে হবে’- বলেন ইকবাল মাহমুদ।
তিনি বলেন, দুর্নীতি করে যারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন, দুদক তাদের পিছুও ছাড়বে না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এক্ষেত্রে কারো ব্যক্তিগত পরিচয়, সামাজিক, পেশাগত, ধর্মীয় অন্য কোনো পরিচয়ে কাজ হবে না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, বিগত প্রায় পাঁচ বছরে আমরা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনগণের আকাঙ্খা পূরণে চেষ্টা করেছি। ব্যক্তি আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল না। আমাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় ছিল অপরাধের ধরন, ব্যাপকতা এবং বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান।’
দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধকে আমলে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। ইকবাল মাহমুদের দাবি, ‘জনহয়রানি যাতে না ঘটে, সেক্ষেত্রে অপরাধী শানক্তকরণেও সতর্কতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করেছি।’
টি আই এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে এখনও ব্যাপকভাবে ঘুষ-দুর্নীতি রয়েছে বলেও উঠে এসেছে। বিশেষ করে সরকারি সেবায় ঘুষের বিষয়ট উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি পরিষেবায় দুর্নীতির প্রভাব রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন দুদক চেয়ারম্যানও। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি যে শুধু সরকারি খাতে তা না, সর্বব্যাপী দুর্নীতির বিস্তৃতি রয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই। সমস্যা আছে, দুর্নীতি আছে। দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা যেমন কঠোর, সরকারের পলিটিক্যাল কমিটমেন্টটাও কঠোর। সেই কঠোরতার কারণে আমি মনে করি, দুর্নীতির মাত্রা যতটুকু বলেছে, অতটুকু না হলেও কিছুটা অন্ততপক্ষে কমেছে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধে কমিশন প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। বিগত পাঁচ বছরে ফাঁদ মামলার মাধ্যমে অসংখ্য ঘুষখোরকে ঘুষের টাকাসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কারও কারও বিচারিক আদালতে সাজাও হচ্ছে।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, গণশুনানির মাধ্যমে তৃণমূলের সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারে কর্মরত কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালনের নামে ঘুষের মতো ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন। এদের পরিণতি সুখকর হবে না। আজ হোক কাল হোক তদেরকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।