বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে যারা বিরোধিতা করছে, তাদেরকে আলাপ আলোচনায় বোঝাতে চান নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। তিনি মনে করেন, সমস্যা যেখানে আছে, সেখানে সমাধানও সম্ভব।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতে ইসলামী আন্দোলন আর হেনে হিঁচড়ে ফেলে দিতে হেফাজতে ইসলামের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
গত ২৪ অক্টোবর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পাঁচ দিন পর রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ফরিদুল।
বাংলাদেশের স্থপতির এই ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে ধর্মভিত্তিক দুটি দল ও সংগঠনের বক্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকে দেশ জুড়ে কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
গত শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, যে সরকারই যার ভাস্কর্যই নির্মাণ করুক না কেন, তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।
এর আগে ইসলামী আন্দোলন রাজধানীতে সমাবেশ করে বলেছে, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেবে।
শুরুতে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দলেও এখন সরব হয়েছে। দলের নেতারা ভাস্কর্যবিরোধীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ রাজপথে নেমে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের চট্টগ্রাম সফর ঠেকিয়ে দিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধোলাইপাড়ের ভাস্কর্য হবেই, আরেকটি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মনে করেন আলোচনা করে সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন সমাধানের উপায়ও থাকে। ভবিষ্যতে এমন যেন না ঘটে আমরা সচেষ্ট থাকব।'
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে, তাদের বুঝতে হবে, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। বিষয়গুলো নিয়ে বসে আলোচনা করে কী করা যায়, সেটা ঠিক করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে কবে কাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেয়া হবে বা বিরোধীদেরকে কীভাবে বোঝানো হবে, এ বিষয়ে কিছু জানাননি প্রতিমন্ত্রী।
নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন বলে এই ইস্যুতে আর কোনো কথা না বলে সবার সহযোগিতা চাইলেন ফরিদুল হক খান।
দুষ্টুদের কঠোর হাতে দমন
এর আগে লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু দুষ্টু লোক থাকে, যারা হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের সেসব দুষ্টুচক্রকে কঠোর হাতে দমন করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পবিত্র সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। এই ধর্মনিরপেক্ষতা চেতনা ধারণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সকল ধর্মাবলম্বীর সমঅধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আবহমানকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির মধ্যে বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নৈতিকতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’