বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শিশু আবদুল্লাহকে অপহরণ ও হত্যা মামলার তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর বিচারক নূরে আলম এ দণ্ডাদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তিন আসামি হলেন হৃদয় চাপরাসি (২১), মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) ও ফায়জুল ইসলাম (২৮)। তাদের বাড়ি মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১০ মার্চ মোরেলগঞ্জের বিশারীঘাটা গ্রামে আড়াই মাসের শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন মা রেশমা বেগম ও বাবা সোহাগ হাওলাদার। রাত সাড়ে তিনটার দিকে তারা দেখেন আবদুল্লাহ নেই, ঘরের জানালার গ্রিল কাটা; দরজা বাইরে থেকে আটকানো। এ ছাড়া তাদের মোবাইল ফোনটিও নেই।
১১ মার্চ আবদুল্লাহর বাবা মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর দুর্বৃত্তরা ফোন দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
১৩ মার্চ তাদের চাহিদামতো সেই মুক্তিপণ পরিশোধ করে পরিবারটি। কিন্তু শিশুটিকে ফিরিয়ে না দিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।
এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করলে মোটরসাইকেল ফেলে বাগানের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে ১৭ মার্চ পুলিশ গুলিশাখালী গ্রাম থেকে হৃদয় চাপরাসিকে গ্রেফতার করে।
হৃদয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮ মার্চ দুপুরে বিশারীঘাটার কাচারিবাড়ি এলাকার একটি মাছের ঘেরের টয়লেট থেকে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিনই হৃদয়ের দুই সহযোগী মহিউদ্দিন ও ফায়জুলকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল মতিন জানান, তিনি তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ২০২০ সালের ৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে। এ মামলায় ২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ২৫ নভেম্বর বিচারকাজ শেষ করে আদালত।
মামলার রায়ে শিশুটির বাবা, মা ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রণজিৎ কুমার মণ্ডল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী এনামুল হেসেন জানান, তার মক্কেল আদালতে ন্যায়বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।