বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদী দখলের অভিযোগ: এমপি আসলামের সাফাই

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:৪৯

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নদীর প্লাবন ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মায়িশা গ্রুপ ও আরিশা ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম প্রাকৃতিক জলাধার আইন ২০০০ এর ৫ ধারার বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইকোনমিক জোনটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব আরও প্রকট হবে। তবে এমপি আসলামের দাবি, কমিশনের জরিপ উদ্দেশ্যমূলক।

বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ দখল নিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের জরিপ ও সুপারিশকে ‘অবৈধ’ দাবি করেছেন মায়িশা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক।

হাইকোর্টের নির্দেশে নদী রক্ষা কমিশন জরিপ চালালেও আসলামুল হক বলেছেন, কমিশনের কাজ এখতিয়ারবহির্ভূত। বিরোধপূর্ণ নদী তীরে নতুন করে জরিপের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।  

রাজধানীর ধানমন্ডির মায়িসা গ্রুপের কার্যালয়ে শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান এমপি আসলাম।

বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরে এমপি আসলামের মালিকানাধীন ‘আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন’ ও ‘মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্ট’ অবৈধ বলে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত দেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এই দুটি স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদের সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেছে কমিশন। শিগগিরই সেটি হাইকোর্টে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রধান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

এই প্রতিবেদন নাকচ করে সংবাদ সম্মেলন করেন আসলামুল হক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর জায়গা জরিপের নামে যেভাবে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করে আমাকে দখলদার প্রমাণ করতে চাচ্ছে তা অবৈধ। আমি আদালতে তিনটি রিট করে রেখেছি, এর রায় আসার আগে তারা আমাকে দখলদার বলতে পারেন না।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘নদী রক্ষা কমিশন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাদ দিয়েই জরিপ চালিয়েছে। তারা এই জরিপে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন কর্তৃপক্ষের (বেজা) কোনো মতামত নেয়নি। এর সঙ্গে জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরাও যুক্ত ছিলেন না।’

এমপি আসলাম বলেন, একটা ইকোনোমিক জোন করতে বিভিন্ন দপ্তরের সুপারিশ ও অনুমতি নিতে হয়। নদীর জায়গায় মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্ট করলে তারা নিশ্চয়ই বাধা দিত।’

আদালতের নির্দেশে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের জরিপ চালানোর বিষয়টি ‘মিথ্যা’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।’

বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করার অভিযানের অংশ হিসেবে গত ৩ মার্চ মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্টের সীমানা প্রাচীরসহ বেশকিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় বিআইডাব্লিউটিএ। উদ্ধার করা হয় প্রায় চার একর জমি। এই প্ল্যান্টের পাশেই রয়েছে আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন।

বিআইডব্লিউটিএর অভিযানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে তিনটি রিট করেন এমপি আসলামুল হক। এর মধ্যে একটি রিট হয় বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চে। এর শুনানি নিয়ে আদালত বিরোধপূর্ণ ভূমিতে জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন দিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নির্দেশ দেয়।

এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর নদী রক্ষা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ জায়গায় জেলা প্রশাসন, বিআইডাব্লিউটিএ, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) মতো আটটি সরকারি সংস্থা জরিপ চালায়।

এসবের ভিত্তিতে নদী রক্ষা কমিশনের তৈরি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপি আসলামের বিরুদ্ধে নদীর জায়গা দখলের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নদীর প্লাবন ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মায়িশা গ্রুপ ও আরিশা ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম প্রাকৃতিক জলাধার আইন ২০০০ এর ৫ ধারার বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইকোনমিক জোনটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব আরও প্রকট হবে। তাই বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ রক্ষার স্বার্থে আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন ও মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।  

বুড়িগঙ্গা নদীর ৫৪.০১৭৮ একর প্লাবনভূমিতে আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন ও মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্টের অবস্থানের বিষয়টি ‘প্রমাণিত সত্য’ উল্লেখ করে কমিশন বলেছে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসলামের দখলের কারণে মরে গেছে নদীর ১৪ কিলোমিটার এলাকা।

আরিশা বেসরকারি ইকোনমিক জোন ও মায়িশা পাওয়ার প্ল্যান্টকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া ছাড়পত্র আইনের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাল শ্রেণিভুক্ত করে ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়েছে। নদীর জমি জেনেও অবস্থানগত, ইআইএ, পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়া যুক্তিসঙ্গত হয়নি। 

প্রতিবেদনে দ্রুত এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এমপি আসলাম অবৈধ স্থাপনা নিজ উদ্যোগে অপসারণ না করলে উচ্ছেদের সম্পূর্ণ খরচ তাকে দিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও একাধিক সংস্থার সাহায্য নিয়ে নদীর জায়গা দখলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আদালতের নির্দেশনা মেনেই সব কাজ করছি। দখল যেই করুক নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবেই।’

এ বিভাগের আরো খবর