বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নামের মিলে কারাভোগ, মামলার জালে আট বছর

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ২২:২৩

‘২৩ দিন কারা ভোগের পর আদালতে ছবি যাচাইয়ে দেখা যায় দিনমজুর স্বপন প্রকৃত আসামি নন। কিন্তু তাকে মামলা থেকে খালাস না দিয়ে জামিন দেয় আদালত।’

নামের মিলের কারণে শরীয়তপুরের এক দিনমজুর ২৩ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হলেও আট বছরে মামলা থেকে খালাস পাননি বলে দাবি আইনজীবীর।

ওই দিনমজুরের নাম স্বপন খান। বাড়ি জাজিরা উপজেলার মতিসাগর গ্রামে। কিন্তু একই উপজেলার হামগাঁও গ্রামের ‘প্রকৃত অপরাধী’ আরেক স্বপনের দেয়া ভুল তথ্যের কারণে দিনমজুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রতিবেদন, পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি বিদেশি পিস্তলসহ উপজেলার হামগাঁও গ্রামের স্বপন খান ওরফে সুমন খানকে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আটক করে রাজধানীর গুলশান থানার পুলিশ।

এ ঘটনায় করা মামলায় ঠিকানা দেয়ার সময় ভুল তথ্য দেন স্বপন। সেই ঠিকানা যাচাই না করেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আব্দুল মতিন।

ওই মামলায় দুই মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান স্বপন। তবে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।  

তবে সেই পরোয়ানায় প্রকৃত আসামিক হামগাঁওয়ের স্বপনকে গ্রেফতার না করে মতিসাগর গ্রামের দিনমজুর স্বপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।

স্বপনের বাবা মালেক খান জানান, ২০০৯ সালে একবার জাজিরা থানার পুলিশ তাদের বাড়ি এসেছিল। স্বপনের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশ তাদের সামনেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছিল, এটা আসামি স্বপনের বাড়ি না। এরপর চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ২০১২ সালে পুলিশ আইস্যা আমার পোলারে থানায় লইয়া যায়। তারপর জেলে পাঠায়। আমি ঢাকায় গিয়া উকিল ধরি। উকিল প্রমাণও করে এইড্যা আসামি স্বপন খান না। বিনা দোষে আমার পোলায় জেল খাটল।’

স্বপনের স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, ‘মামলা চালাইতে গিয়া নিস্ব হইয়া গেছি। জমিজমা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি সব বিক্রি করছি। মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা আনছি। এনজিও থিকা কিস্তি উঠাছি। আমার স্বামী এখন বিদেশে আছেন।’

দিনমজুর স্বপনের আইনজীবী ছাবিবা রনি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ২৩ দিন কারা ভোগের পর আদালতে ছবি যাচাইয়ে দেখা যায় দিনমজুর স্বপন প্রকৃত আসামি নন। কিন্তু তাকে মামলা থেকে খালাস না দিয়ে জামিন দেয় আদালত।

তিনি বলেন, ‘সঠিক তদন্ত হলে নামের বিভ্রাট কেটে যেত। আমার মক্কেল আর ভোগান্তির শিকার হতো না।’

জাজিরা থানার তৎকালীন এসআই আব্দুল মান্নান গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানিয়েছিলেন, প্রকৃত আসামি নিজের ঠিকানা গোপন করে অন্য ঠিকানা দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যাচাই না করে ওই ঠিকানায় অভিযোগপত্র দেয়ায় এই সমস্যা হয়েছে।

এদিকে হামগাঁও গ্রামের স্বপন খান ওরফে সুমন খানের বাড়ি গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে তার এক ভাগনি জানান, স্বপন বর্তমানে রংপুর কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালে একটি হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের শরীয়তপুরের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রকৃত আসামির রিমান্ড করেছেন। তিনি তাকে চেনেন। তবে কীভাবে অভিযোগপত্রে অন্য এক জন নিরাপরাধ ব্যক্তির নাম লিখলেন! এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে গুলশান থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন এখন কোথায় আছেন, তা তার জানা নেই। কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না।

এ বিভাগের আরো খবর