বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১ টাকার শিঙাড়া ২৬ বছর ধরে

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ২০:১৬

দিনাজপুর শহরের চকবাজারের শচীন কুমারের দোকানে মিলবে এই মুখরোচক খাবার। তিনি প্রায় ২৬ বছর ধরে এক টাকা দরেই শিঙাড়া ও নিমকি বিক্রি করে আসছেন।

এখন তো এক টাকার নোট নেই। কয়েন আছে, তাও সচরাচর চোখে পড়ে না। আর এই এক টাকায়ই কিনা কেনা যায় একটি শিঙাড়া অথবা নিমকি। তাও আবার ভালো মানের।

হ্যাঁ, দিনাজপুর শহরের চকবাজারের শচীন কুমারের দোকানে মিলবে এই মুখরোচক খাবার। তিনি প্রায় ২৬ বছর ধরে এক টাকা দরেই শিঙাড়া ও নিমকি বিক্রি করে আসছেন।

বাবার দেয়া নাম যদিও শচীন কুমার, এলাকায় তার পরিচিতি শচীন কাকা বলে। ছেলে বুড়ো সবাই তাকে এই নামে চেনেন। আর তার শিঙাড়ার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বেশ।

 

বাড়ির পাশের একটি দোকানঘর। সেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে শিঙাড়া বিক্রি। শহরের লোকজন তো বটেই, শহরের বাইরে থেকেও ক্রেতারা দোকানটির সামনে জড়ো হন। অনেক সময় দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করেন।

শুধু দামেই কম নয়, ওই শিঙাড়ার বিশেষত্ব আছে। কয়েক জন ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, শচীন কাকার সিঙাড়া টাটকা। কোনো ধরনের ভেজাল থাকে না। খেতে অতি সুস্বাদু। কাকার শিঙাড়া ৫/৬ দিন রেখে দিলেও নষ্ট হয় না। ঠিকই খাওয়া যায়।

অন্য দোকানে একটি শিঙাড়া কিনতে লাগে পাঁচ টাকা। সেগুলো খেলে পেটে বায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু শচীন কাকার দোকানের শিঙাড়ায় এ সব ঝামেলা পোহাতে হয় না।

এসব কারণে শুধু দিনাজপুরেই সীমাবদ্ধ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে শিঙাড়ার কিনে নিয়ে যান। এমনকি অনেকে দেশের বাইরে প্রিয়জনদের জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে যান তার নিমকি ও শিঙাড়া।

দিনে কতগুলো শিঙাড়া বিক্রি হয় তার দোকানে? শচীন কুমারের জবাব, প্রতিদিন আট হাজার থেকে ১০ হাজার শিঙাড়া ও নিমকি বিক্রি করেন।

তার মানে মাসে তিনি ২ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকার শিঙাড়া ও নিমকি বিক্রি করেন।

শচীন কুমার কথা বলেন প্রমিত বাংলায়। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৯৫ সাল থেকে এই এক টাকার শিঙাড়া বিক্রি করছি। পাশাপাশি এক টাকার নিমকি বিক্রি করি। শিঙাড়া ও নিমকি তৈরি করতে গড়ে প্রতিদিন ২০ কেজির বেশি আটা ও ময়দা লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার শিঙাড়া ও নিমকি বিক্রি করি।’

প্রথম থেকে তার স্ত্রী ও ছেলে সাহায্য করতেন। কিন্তু ছেলেটা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এখন তার স্ত্রী তাকে সাহায্য করছেন। এর পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

এই দীর্ঘ ২৬ বছরে বাজারে অনেকবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু তিনি শিঙাড়া ও নিমকির দাম বাড়াননি। মানের সঙ্গেও আপস করেননি। ভালো আটা-ময়দা ব্যবহার করেছেন। এগুলো ভাজতে ভালো তেল ব্যবহার করে আসছেন। একদিনের ব্যবহার করা তেল ফেলে দেন। অন্য দোকানিদের মতো পোড়া তেলে আবার শিঙাড়া ভাজেন না তিনি। এত কিছুর পরও এক টাকা দরেই বিক্রি করেন প্রতিটি শিঙাড়া ও নিমকি।

এর একটা কারণ আছে। তিনি স্রেফ টাকা কামাই করার এই ব্যবসা করেন না। শচীন কুমার মনে করেন এটা এক ধরনের সেবা।

এর মধ্য দিয়েই তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দিনাজপুরবাসীর মনের ভিতর বেঁচে থাকতে চাই।’ 

এ বিভাগের আরো খবর