মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার প্রধান সড়ক প্রশস্ত ও উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে ৮০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সড়কের উন্নয়ন কাজ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা।
একপাশে চলছে কাজ, আর অন্যপাশে ফাটল ধরেছে রাস্তাটিতে। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় হেলে পড়েছে গাইডওয়াল। এমন অবস্থায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ।
প্রায় দুই বছর মেয়াদী মুন্সিগঞ্জের ভবেরচর থেকে গজারিয়া উপজেলা হয়ে লঞ্চঘাট পর্যন্ত রাস্তাটির মানোন্নয়নের কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।
১২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের প্রশস্তকরণ ও মানোন্নয়ন ছাড়াও চারটি ব্রিজ ও একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষের পথে।
স্থানীয়দের দাবি, যে ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছে তার অধিকাংশেই অর্থের অপচয় হয়েছে। কেননা জলাশয় নেই এমন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে ব্রিজ।
গাইডওয়াল হেলে পড়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত লাভের মনোভাবকে দায়ী করেছেন তারা।
এ পথের নিয়মিত যানবাহন চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজের মান নিয়ে প্রথম থেকেই তাদের মনে প্রশ্ন ছিল। রাস্তার কাজ চলমান অবস্থায় রাস্তার দুই পাশের গাইডওয়াল (উঁচু জায়গায় সড়ক নির্মাণ হলে নিচের মাটি ধরে রাখার দেয়াল) অনেক জায়গায় হেলে পড়েছে। প্রধান সড়কের দুই পাশে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুদ হাই টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, আপাতত সড়কের দুই ধারের ফাটল বন্ধ করতে সেখানে সিমেন্ট ও পাথরের কুচি দিয়ে ঢালাই করে দিচ্ছেন তারা।
সড়কের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির চরপাথালিয়া, শ্রীনগর মোড়, মাথাভাঙ্গা এলাকায় গাইডওয়াল হেলে পড়েছে। গজারিয়ায় ভেঙে গেছে প্যালাসাইটিংয়ের কিছু জায়গা।
রাস্তার উন্নয়ন কাজের শেষই হয়নি, এরই মধ্যে হেলে পড়েছে গাইডওয়াল। ছবি: নিউজবাংলা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান সাদী জানান, স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, গাইডওয়ালের কিছু অংশ সামান্য হেলে পড়েছে বলেই কাজে অনিয়ম হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। কাজ এখনো চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দিচ্ছে। গাইডওয়ালটি নতুন মাটির ওপর করার কারণে এ ধরনের ত্রুটি হতে পারে। পরবর্তী সময়ে সংস্কার করলে এটি ঠিক হয়ে যাবে।
রাস্তাটির তদারকিতে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, ‘গাইডওয়ালের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন মিটারই আছে। ঢেউয়ের তোড়ে কিছু জায়গায় মাটি সরে যাওয়ায় ও নতুন মাটিতে গাইডওয়াল তৈরির কারণে কিছু অংশ হেলে পড়েছে।
‘প্যালাসাইটিং করা আছে এমন কিছু জায়গায় রাস্তার কিছু অংশ ভেঙে গেছে, সেসব জায়গাতেও মেরামত কাজ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যত সমস্যা থাকবে পর্যায়ক্রমে তার সবগুলো সমাধান করানো হবে।’
সসার ড্রেনের বিষয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন চিহ্ন না পাওয়া গেলেও কর্মকর্তা ড্রেন তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
কাজ শেষ না হতেই সড়কে দেখা দিয়েছে ফাটল। ছবি: নিউজবাংলা
এ নিয়ে জানতে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘এস্টিমেট (পূর্ব-পরিকল্পনা) না দেখে কাজে অনিয়ম হয়েছে সেটি বলা যায় না। এস্টিমেটিং যা ধরা আছে সে অনুযায়ী কাজ করলে অনিয়মের অভিযোগ করা যাবে না।
‘তবে রাস্তাটির যে পাশে গাইডওয়াল হেলে পড়েছে সেখানে স্লোপ (ঢাল) কম হতে পারে। আর রাস্তার দুই পাশে যে ফাটল দেখা যাচ্ছে, সেখানে সসার ড্রেন দিলে ভালো হতো।’
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুদ হাই টেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের এর স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।