বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাড়াবাড়ি করলে ‘বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবো’

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ১৭:৫৯

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে গ্রেফতারের দাবি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে রাজধানীর শাহবাগের একটি সমাবেশ থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, না থামলে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া হবে।

সমাবেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে গ্রেফতারসহ সাতটি দাবি জানানো হয়েছে। পূরণ না হলে সারাদেশে রাজপথে নামার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

শনিবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে। এর আগে সেখানে একটি বিক্ষোভ মিছিলও হয়।

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল। ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে প্রথমে বলা হয়, এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে সেটি বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।

পরে হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকও একই ধরনের বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সমাবেশে সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘তাদের পাকিস্তানে পাঠাতে হবে। অবশ্য পাকিস্তান নেবে কি না সন্দেহ আছে। বেশি লাফালাফি করলে দুমড়েমুচড়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেব।’

বিশ্বে সব জায়গায় ভাস্কর্য রয়েছে জানিয়ে মানিক বলেন, ‘তারা ভাস্কর্য আর মূর্তির পার্থক্য বোঝে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছিল। এখন ছাত্র বলাৎকার করে মাদ্রাসায়।’

শুরুতে আওয়ামী লীগ মুখ না খুললেও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাঠে নামে মামুনুল হকের একটি মাহফিলকে ঘিরে। তাদের হুঁশিয়ারির পর শুক্রবার হাটহাজারীর ওই মাহফিলে যোগ দেননি মামুনুল হক। যদিও ওই মাহফিলে হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তারা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেবেন।

পরদিন এই বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বাবুনগরীর বক্তব্যকে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামি রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ হেফাজতকে শাপলা চত্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান হতে বলেছেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ রোববার সারাদেশে কর্মসূচি দিয়েছে। ছাত্রলীগও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশে ভাস্কর্যবিরোধীদের ‘ভাসায়া দেয়ার’ হুমকি দেয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিরোধের ঘোষণায় শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাহফিলে যাননি হেফাজত নেতা মামুনুল হক

 

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবি অনুযায়ী, মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। নাইলে ফ্রান্সে মহানবীকে (সা.) কটূক্তি করার প্রতিবাদে যেভাবে রাস্তায় নেমেছিলাম, তেমনি মামুনুল হকের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় নামব।’

‘আগামী ১ ডিসেম্বর দেশের সকল জেলা, উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সকল ইউনিট একযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। আমাদের দাবি মানা না হলে ১ ডিসেম্বরের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে এই বেদিতে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য

 

ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ভাস্কর রাশা প্রমুখ।

সমাবেশ চলাকালে শাহবাগে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সাত দাবি

১. মহানবী (স.) কে অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার অপরাধে মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২. দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।

৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।

৪. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৫. ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৬. মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

৭. মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর