করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে দেশে ব্যবসার পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।
করোনোকালে দুই কোটি গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান ও ভাড়াটিয়াদের ঘর ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে বাংলাদেশ নাগরিক সমিতি নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে এই মতবিনিময় সভা হয়।
আলোচনা সভায় জাফরুল্লাহ বেশি কথা বলেন করোনার টিকা নিয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘করোনাকালে দেখেন, ব্যবসা কী রকম করছে? যে ভ্যাকসিন এখনও সঠিক কিনা প্রমাণিত হয়নি, সেটা আমরা পাঁচ ডলার দিয়ে কিনে ফেলেছি।’
ভারতের সিরাম থেকে তিন কোটি টিকা আনতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা সিরাম থেকে কিনবে বাংলাদেশ। আর সিরামের সঙ্গে চুক্তি আছে বেক্সিমকো ফার্মার। ফলে এই চুক্তিতে লাভবান হবে তারাও।
বেক্সিমকোতে সালমান এফ রহমানের মালিকানা আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জানিয়েছেন পরিবহনসহ একেকটি টিকার দাম পড়বে পাঁচ ডলার।
তবে এই টিকাই শেষ পর্যন্ত আসবে কি না সেটাও নিশ্চিত নয়। কারণ, এখনও কোনো টিকাই কার্যকর বলে প্রমাণ মেলেনি। সরকার জানাচ্ছে, আগেভাগেই তারা যোগাযোগ করে রাখছে যেন উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে আনা যায়।
জাফরুল্লাহর দাবি, ভ্যাকসিন না এনেই টাকা অগ্রিম নিয়ে নেয়া হয়েছে। তার দাবি, সিরাম থেকে যে টিকা আনা হচ্ছে, এটার দাম আরও কম।
তিনি বলেন, ‘তিন ডলারে কিনে পাঁচ ডলারে বিক্রি করবে। আজকে তারা দুই ডলার করে লাভ করবে। সম্ভবত সরকার যে ১৫০০ কোটি টাকা ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ করেছে, তা অগ্রিম উনি (সালমান এফ রহমান) নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ভ্যাকসিনের কোনো দেখা নেই।’
অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা আনতে গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়
বাংলাদেশ কেবল একটি জায়গা থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে তা নয়। টিকা বিতরণে আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। তারা ছয় কোটি ৮০ লাখ টিকা দেবে বলে সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।
গ্যাভির কাছ থেকে বাংলাদেশ সংক্রামক ব্যাধির টিকা পেয়ে থাকে। এ জন্য মূল্যের মাত্র ১০ শতাংশ টাকা দিতে হয়। করোনার টিকাও দেড় থেকে আড়াই ডলারে পাওয়া যাবে এই সংস্থা থেকে। বাকি অর্থ বহন করবে টিকা নিয়ে কাজ করা এই আন্তর্জাতিক জোটটি।
টিকা নিয়ে আগেভাগে কাজ করার দরকার নেই বলেও মনে করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে এতো তাড়াহুড়া করার কিছু নেই। আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। এটা প্রমাণিত হলে বিনা পয়সায় আমরা পাব। তার জন্য গ্যাভি আছে, ইউনিসেফ আছে।’
জাফরুল্লাহর দাবি, টিকা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের সুযোগ হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের দিকে চেয়ে আছি। সিনোভ্যাক বিনা পয়সায় আসতে চাইল বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য, আমরা দেইনি।
‘আমরা এখন পিছনে ঘুরছি, তারা বলছে আমাদের সময় নেই। এই জাতীয় জিনিস কারা করে… যদি সরকার জনগণের না হয়, যারা জনগণের কথা চিন্তাই আনে না।’