বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের বেশিরভাগই হীনযানপন্থি। খুবই ক্ষুদ্রসংখ্যক মানুষ মহাযান পন্থার অনুসারী। তাদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন।
বৌদ্ধ ধর্মানুসারীরা হীনযান ও মহাযানে বিভক্ত। ভারতবর্ষ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা হীনযানপন্থা অনুসরণ করে থাকে। আর তিব্বত, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি দেশের অনুসারীরা মহাযান পন্থা অনুসরণ করে।
বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় কিছু বৌদ্ধ মহাযানপন্থা অনুসরণ করে। তারা নিজেদের লুরি (পন্থি প্রবজ্যাধারীরা ‘লুরি’ নামে পরিচিত) বা রাউলী নামে পরিচয় দেন। চাকমা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এই লুরিরা নিজস্ব রীতিনীতি মেনে মহাযান পন্থা অনুসরণ করে থাকে।
এই মহাযানপন্থিদের সবচেয়ে পুরোনো বৌদ্ধ বিহারটি রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা পুকুরঘাট এলাকায়। ১ নম্বর নোয়াপাড়া মহাযান লুরি বৌদ্ধ বিহারটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় আরও ১৭টি মহাযানপন্থি লুরি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে।
প্রান্তিক মহাযানপন্থিরা অনেক কষ্টে তাদের ধর্মীয় আচার টিকিয়ে রেখেছেন।
জীর্ণশীর্ণ উপসানালয়গুলোর সংস্কারে এবং ধর্ম পালনের সুবিধার্থে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
নোয়াপাড়া মহাযান লুরি বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কামটির সভাপতি ধনিতা চাকমা বলেন, ‘নিজেদের উদ্যোগে কোনো সরকারি সংস্থার সাহায্য ছাড়া আমাদের বিহারগুলো পরিচালিত হয়। বিহারের যাবতীয় উন্নয়ন মহাযানপন্থিদের দানের ওপর নির্ভরশীল।
‘নোয়াপাড়া মহাযান লুরি বৌদ্ধ বিহারের লুরিদের থাকার ঘর, বিহারের সীমানা প্রাচীর, রান্না ঘর ইত্যাদি নির্মাণ করা জরুরি। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়নে পার্বত্য জেলা পরিষদ বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সহায়তা দরকার আমাদের।’
বিহার পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য সুকুমার চাকমা বলেন, “লুরিদের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘আগর তারা’ চাকমা বর্ণমালায় লিখিত। আমরাই শত শত বছর ধরে চাকমা বর্ণমালা চর্চা ও ব্যবহারিক প্রয়োগ করে আসছি। আমরাই চাকমাদের মূল সংস্কৃতি লালন পালন করে থাকি।”
নোয়াপাড়া মহাযান লুরি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুমনা নন্দ লুরি বলেন, ‘চাকমাদের আদি ধর্ম হলো এই লুরি ধর্ম। অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান পন্থা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই ধর্ম এখনও টিকে আছে। এই মহাযান পন্থা যাতে বিলুপ্ত না হয় তার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।’
গত ২৩ ও ২৪ নভেম্বর নোয়াপাড়া মহাযান লুরি বৌদ্ধ বিহারে ত্রি চীবর দান অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে লুরি অনুসারীদের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম ঘটে। এ অনুষ্ঠানে হাজারের বেশি অনুসারির সমাগম ঘটে।