বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে এবার হুমকি দিয়েছেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী।
তিনি বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে বলেছেন ভাস্কর্য নির্মাণ হলে টেনে ফেলে দেবেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করলে আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরির হুমকি দিয়ে প্রতিরোধের মুখে যে মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে মামুনুল হক উপস্থিত হননি সেই মাহফিলেই এই হুমকি দেন তিনি।শুক্রবার বাদ জুমা চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পার্বতী মডেল সরকারি বিদ্যালয় মাঠে এই মাহফিল হয়।
ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল।
যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন সেখানে এই স্থাপনা হবেই, আরও একটি করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘শরিয়তে কোনো ভাস্কর্যের অনুমতি নাই। তাহলে অন্য কারও ভাস্কর্য কেন? যে দলের নেতা বা ব্যক্তির ভাস্কর্য বসাক না কেন, এমনকি আমার বাবার হলেও সেটা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব।’
এই মাহফিলের প্রধান বক্তা হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দুই দিন ধরে রাজপথে সক্রিয় ছাত্র ও যুবলীগ। সকালে তারা নগরীর প্রতিটি প্রবেশপথে অবস্থান নেয়।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হক আজকের সমাবেশে আসতে আগ্রহী ছিলেন না। পরিস্থিতির কারণে আমরাও তাকে আনতে আগ্রহী নই। তাই তিনি আসেননি।’
বাবুনগরী আরও বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই। সংঘাত চাই না। আমাদের আন্দোলন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। আজকের মাহফিলে মামুনুল হক সাহেব প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাকে যাতে মাহফিলে না রাখা হয়। আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, তাকে মাহফিলে আনব না।’
তবে মামুনুল হক আগের রাতেই সড়ক পথে চট্টগ্রাম গিয়ে মাদ্রাসায় অবস্থান নেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মাহফিলে যাননি।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে শুধু শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের কটুক্তির প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করবে, জনগণ তাদের ঘাড় মটকে দেবে।
এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে দুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। বৃহস্পতিবার নগরীতে সমাবেশ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা ঘোষণা দেন, বন্ধবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কটুক্তিকারী মামুনুল হককে প্রতিহত করবেন তারা। শুক্রবার সকালে নগরীর প্রবেশপথ এমনকি বিমানবন্দরে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
হেফাজতের আমির বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে জানতে চাই কেন আজকে তার অনুপস্থিতির পরেও চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। তার এই সহনশীল নমনীয় আচরণের সুযোগে যারা মামুনুল হকের সঙ্গে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মামুনুল হকের মাফফিলে অংশগ্রহণ না করার প্রতিক্রিয়ায় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে প্রতিহত করতে সকাল থেকে ছাত্রলীগ নগরের প্রবেশদ্বারে পাহারা বসিয়েছিল। এ ছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। হাটহাজারীতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতাকারী মামুনুল হক ভয়ে মাহফিলে বক্তব্য দেননি। আমরা শুনেছি তিনি গোপনে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন।’
ভাস্কর্য ইস্যুতে বাবুনগরী বলেন, ‘মদিনা সনদে দেশ চললে এ দেশে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। মদিনায় কোনো ভাস্কর্য নেই। এ দেশেও কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। আমি কোনো নেতার বা দলের নাম বলব না। আমি শরিয়তের কথা বলব, শরিয়তে কোনো ভাস্কর্য অনুমতি নাই।’
রাত পৌনে ৮টার দিকে জুনাইদ বাবুনগরীর বক্তব্য শেষ হয়।