চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখায় দিনেদুপুরে ডাকাতির দুই সপ্তাহ পার হলেও হোতাদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ কারণে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে পুলিশ বলছে, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা হবে তাদের। কী ঘটেছিল সেই দিন১৫ নভেম্বর দুপুর ১টা। স্বাভাবিক কাজ চলছিল সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখায়। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মী ও গ্রাহকসহ ১০ জন ছিলেন ব্যাংকের ভেতর। ঠিক পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ হেলমেট ও পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরে সশস্ত্র তিন ব্যক্তি ব্যাংকে ঢোকে।
এক প্রহরীর গলায় চাকু ঠেকিয়ে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দেয় তাদের এক জন। অন্য দুই জন আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রহরী ও গ্রাহককে জিম্মি করে একটি কক্ষে বন্দি করে। কেড়ে নেয় সবার মোবাইল ফোন। পরে ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা লুট করে পালিয়ে যায় তারা।
জীবননগরে কয়েক কোটি টাকার লেনদেনজীবননগর উপজেলায় আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ ১২টি ব্যাংকের শাখা, ১৩টি এজেন্ট ব্যাংক ও দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু আছে। এর মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ চারটি এজেন্ট ব্যাংক, উথলী গ্রামে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক, রায়পুর বাজারে একটি এজেন্ট ব্যাংক, হাসাদাহ বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ দুটি এজেন্ট ব্যাংক ও জীবননগর পৌর শহরে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার গ্রামগুলোতে দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়।
নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংকগুলোর উদাসীনতাউপজেলার আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাসহ মোট ১২টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র দুইটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় এবং চারটি বেসরকারি ব্যাংক শাখায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। বাকি ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় কোনো সিসিটিভি নেই (নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকের শাখাগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো না)। এসব ব্যাংকের শাখাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরী থাকলেও অধিকাংশ প্রহরীর হাতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। আর সেই সুযোগই নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটি মোটরসাইকেলে উথলীর দিকে যায় তিন জন। ব্যাংক ডাকাতি শেষে একই মোটরসাইকেলে তারা আন্দুলবাড়িয়ার দিকে চলে যায়। ব্যাংক থেকে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় বাধা দিতে গেলে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। উথলী বাজারের ব্যবসায়ী সুজন মীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দোকান থেকে রড বের করে বাধা দিতে গেলে ডাকাতদের এক জন পিস্তল বের করে আমাকে গুলি করতে যায়। বেশি বাড়াবাড়ি করলে খুন করার হুমকি দেয়।’ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ওই তিন দুর্বৃত্ত অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে ব্যাংকের ভল্ট খুলে দিতে বাধ্য করে। তবে ওই সময় টাকা তুলতে এসে অস্ত্রধারীদের দেখে ব্যাংক থেকে দ্রুত বের হয়ে যান এক জন গ্রাহক। তিনি চিৎকার শুরু করেন। এ কারণে তাড়াহুড়া করে ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ৮ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভল্টের কোনো টাকা লুট হয়নি। সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোতে সিসিটিভি কেন বসানো হয়নি, জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খন্দকার আবদুস সালাম বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের নিরাপত্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিৎ। সিসিটিভি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।ঘটনার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় তিন জনকে আসামি করে জীবননগর থানায় মামলা করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিকী। পরে ব্যাংকের গ্রাহকসহ বেশ কয়েক জনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু তেমন কোনো তথ্য না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।
পুলিশ যা বলছে
ডাকাতির পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন ও ক্রাইম) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম। এ সময় ব্যাংকে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্যাংকে যে আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। ওই ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতা ছিল।
ডাকাতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ব্যাংক ডাকাতির পর থেকে দিনরাত কাজ করেছে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। দুই/এক দিনের মধ্যেই জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। দুষ্কৃতিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। খুব শিগগির ফলাফল পাওয়া যাবে।