দেশে করোনাভাইরাসে যত মানুষ মারা গেছে তাদের চার ভাগের তিনভাগই পুরুষ। বিশ্বেই নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যু বেশি; বাংলাদেশে তা আরও বেশি।
গত মার্চ থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছে মোট ছয় হাজার ৫৪৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২৪ জন। বিপরীতে এক হাজার ৫২০ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে।
শতাংশ হিসেবে পুরুষের মৃত্যু হার ৭৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নারীর মৃত্যুর হার ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পুরুষদের মৃত্যুর হার বেশি।
সারা বিশ্বে করোনায় যত মানুষ মারা গেছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৭৩ শতাংশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখার ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, ভারতে মৃতদের ৭০ শতাংশ পুরুষ, পাকিস্তানে এটা ৭২ শতাংশের মতো।
বিশ্ব এমনকি, একই অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশে পুরুষের মৃত্যু কেন আরও বেশি সে বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই। ফলে বিজ্ঞানসম্মত কোনো ধারণা পাওয়ার সুযোগ নেই। যদিও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ধারণার কথা বলে থাকেন।
সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে, ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারটেনশন, দীর্ঘমেয়াদী কিডনি জটিলতা, স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে তাদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে।
সরকারের করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম মনে করেন, বাংলাদেশে করোনায় পুরুষের বেশি মৃত্যুর কারণ অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুসে ক্যান্সার, কিডনি রোগের আধিক্য। এ ছাড়া মদ ও ধূমপানের অভ্যাসও তাদের মধ্যেই বেশি।
রোগে আক্রান্ত হলেও পুরুষদের চিকিৎসা নেয়ার কম প্রবণতাও মৃত্যুর একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এই ভাইরোলোজিস্ট।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের থেকে নারীর বেশি থাকে। তবে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পুরুষের মৃত্যুর হার কেন বেশি- এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সহজ নয়। কারণ, আমার জানা মতে এ বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি হতে পারে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী থেকে পুরুষদের বেশি মৃত্যুর কারণ পুরুষরা অসংক্রামক রোগে বেশি ভোগে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভারের ক্যান্সার, স্ট্রোকেও পুরুষরা বেশি আক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘নেশাজাতীয় দ্রব্য পুরুষ বেশি গ্রহণ করে থাকে। ফলে করোনা আক্রান্ত হয়ে পুরুষদের মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি থাকে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পুরুষরা করোনায় বেশি মারা যায় কেন, এই বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব না।’
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতের পরিসংখ্যান বলা হয়েছে, গত এক দিনে ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ২ হাজার ২৭৩ জনের শরীরে। তাতে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৪ জন। মোট শনাক্ত হয়েছে ছয় কোটি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৩৫৭ জন।