ঘোষণা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারী হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হককে ঠেকাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়েছে পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
নগরের দেওয়ানহাট, অক্সিজেন মোড়েও দেখা গেছে শত শত নেতাকর্মীর অবস্থান।
আগের দিন বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করে মামুনুল হককে চট্টগ্রামে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের আয়োজনে এই সমাবেশে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা প্রায় সবাই প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর বর্তমানে তারা মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হয়েছেন।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে প্রতিহত করতে যুবলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন। তাকে চট্টগ্রামে ঢুকতে দেয়া হবে না।’
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকিদাতা মামুনুল হককে কিছুতেই চট্টগ্রামের মাটিতে আসতে দেয়া হবে না।‘
তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটা থেকে পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া দেওয়ানহাট ও অক্সিজেন মোড়েও আমাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন।’
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে চট্টগ্রামে প্রতিহত করার ঘোষণা বৃহস্পতিবার দেয় শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের সমর্থক ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা
যে এলাকায় মামুনুল হকের মাহফিল হওয়ার কথা, সেই থানা হাটহাজারীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
বিকালে চট্টগ্রামে হাটহাজারীর পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত এক মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মামুনুল হকের।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশে প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর মামুনুল হক মাহফিলে বক্তব্য রাখবেন। তিনি সঠিক সময়ে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।’
মামুনুল হক হুমকি দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ না হলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করা হবে।
এই বক্তব্য দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামুনুল হক তার মজলিস করতে পারেননি। শীতকালে এই মজলিসগুলো তার আয়ের একটি বড় উৎস।
তবে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেছেন, ‘মাহফিলে আমাদের এখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমার এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে এই বেদীতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছেন মামুনুল হক। তবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেছেন, এটা হবেই
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান দিয়েছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল। এটি নির্মাণের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকিও এসেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া না জানালেও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কড়া। তিনি ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে’ বেশি বাড়াবাড়ি না করতে হুঁশিয়ার করে নওফেল বলেছিলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।’
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও সাংবাদিকদেরকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধোলাইপাড়েরটা হবেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর আরও একটি ভাস্কর্য নির্মিত হবে। আর ইসলামী দলগুলোর বক্তব্যের জবাব না দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে যার তার বক্তব্যের জবাব দেন না তারা।